আমাদের ভবিষ্যৎ কি আমরাই ধ্বংস করে চলেছি?
আমাদের ভবিষ্যৎ কি আমরাই ধ্বংস করে চলেছি?
আমরা ছোট বেলায় পড়েছি বন্যা হলে বন্যার পানি এবং জোয়ার হলে জোয়ারের পানি পলি বহন করে আনে এবং জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। কথাটি সর্বৈব সত্য। কিন্তু কথা হলো যেখানে কস্মিনকালেও জোয়ারের পানি ওঠেনা বা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় না সেইসব জমিতে উর্বরতা কোথা থেকে আসে? যেমন আমাদের বাগান বাড়ি। শত শত বছর ধরে বাগান বাড়িতে বিভিন্ন প্রকার ফল ফলাদি'র গাছ আমরা দেখতে পাই। বাগান বাড়ির মাটিতে এই উর্বরতা কীভাবে এত দীর্ঘ সময় ধরে রাখে?
এই উর্বরতা ধরে রাখার মূল কারণ হলো মাটিতে জন্ম নেয়া বৃক্ষ বান্ধব নানান প্রকার ব্যাকটেরিয়া। গাছের জন্য যে ১২ টি খাদ্য উপাদান প্রয়োজন এই ব্যাকটেরিয়া প্রায় সবগুলি উপাদান সরবরাহ করতে পারে। যেখানে মাটি আছে এবং উপযুক্ত পরিবেশ আছে সেখানেই এই ব্যাকটেরিয়া প্রতিবছর বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এই ব্যাকটেরিয়া হলো বৃক্ষ এবং বিভিন্ন প্রকার সবজির মূল খাদ্য উপাদান। এই ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন প্রকার গাছকে শুধু খাদ্যের জোগান দেয় তা-ই নয়, এই ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ক্ষতিকর ছত্রাক থেকে এবং রোগ-জীবাণু থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য একটি প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করে।
আমরা বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ছত্রাক নাশক, বন মারা বিশ ইত্যাদি ব্যবহার করে গাছের প্রকৃত বন্ধু, গাছের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলিকে প্রতিদিন ধ্বংস করে চলেছি। মাটিতে এই উপকারী ব্যাকটেরিয়া না থাকার কারণে আমাদের প্রতিনিয়ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং ছত্রাক নাশক ব্যবহার করে ফসল ফলাতে হচ্ছে। এইরূপ ফসল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং আমাদের বিভিন্ন প্রকার রোগ- ব্যধির অন্যতম কারণ।
রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার না করে যদি আমরা জৈব সার গোবর, ভার্মি কম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্ট, লিভ কম্পোস্ট ইত্যাদি) ব্যবহার করি তাহলে আবার মাটিতে উদ্ভিদের উপকারী বন্ধু ব্যাকটেরিয়া ফিরে আসবে এবং জমিকে পূর্বের মতো উর্বর করে তুলবে।
কাজেই আসুন আমরা আমাদের মাতৃ স্বরুপা মাটিকে প্রতিনিয়ত নষ্ট না করে ভবিষ্যৎ কৃষকের আয় কত জানেন ব্যবহার উপযোগী করে রেখে যাই।
ধন্যাবাদ
প্রফেসর বিজন কৃষ্ণ মৃধা। নাজিরপুর, পিরোজপুর