করলা চাষ পদ্ধতি

 

করলা চাষ পদ্ধতি


করলা চাষের সঠিক পদ্ধতি এবং এর চাষে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে তা জানুন


সবজি চাষে উৎসাহিত করার প্রধান কারণ হলো অল্প সময়ে সবজির ফসল তৈরি হয়, যা কৃষক বিক্রি করে দ্রুত টাকা পেতে পারে। যদিও গম, ছোলা, সরিষা ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদী ফসল। তাই কৃষকদের প্রধান রবি ফসলের পাশাপাশি সবজি চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় কৃষকের উচিত এমন সবজি চাষ করা যেখান থেকে সে অধিক লাভবান হতে পারে। প্রসঙ্গত, এমন অনেক সবজি আছে যেগুলো থেকে কম সময়ে ভালো লাভ করা যায়। তবে এসবের মধ্যে করলা একটি বিশেষ সবজি যার দাম বাজারে বেশ ভালো। এতে করে করলা চাষ করে কৃষকরা ভালো লাভ করতে পারেন।

করলার ঔষধি গুণ রয়েছে

করলার গুণাগুণ থাকায় বাজারে চাহিদা রয়েছে প্রচুর। এটি সুগার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়। চিকিৎসকরাও ডায়াবেটিস রোগীদের করলার রস করলার সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন। এটি চিনি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এর তিক্ততাই এর সবচেয়ে বড় গুণ। কিন্তু তিক্ততার কারণে অনেকে একে লবণ পানিতে রেখে তারপর রান্না করেন। লবণ দিয়ে এর তিক্ততা দূর হয়। এতে অনেক ধরনের ভিটামিন পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন , বি এবং সি পাওয়া যায়।  ছাড়া ক্যারোটিন, বিটাক্যারোটিন, লুটেইন, আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়ামম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো ফ্ল্যাভোনয়েড পুষ্টিও পাওয়া যায়। এর ব্যবহারে অনেক রোগে উপশম পাওয়া যায়। চর্মরোগেও এর ব্যবহার উপকারী। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এর সেবনে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। পাথরের রোগীদের জন্যও এর ব্যবহার খুবই উপকারী বলা হয়েছে।  ছাড়া এর সেবনে বমি ডায়রিয়া, স্থূলতা কমানোর পাশাপাশি রক্তাক্ত পাইলস জন্ডিসে উপশম পাওয়া যায়। এইভাবে করলা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে।

কেন কৃষকদের করলা চাষ করা উচিত

করলা চাষ করে কৃষকরা খুব কম খরচে খুব ভালো লাভ করতে পারে। অনেক কৃষক জানান, এর চাষে যে খরচ হয় তার ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি লাভ হয়। কারণ বাজারে এর চাহিদা থাকে যার কারণে এর ভালো দাম পাওয়া যায়। চাষাবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন অনেক কৃষক। হারদোই, ইউপির কৃষকরা যারা করলা চাষ করেন, তারা জানান যে 1 একর জমিতে করলা চাষ করতে প্রায় 30,000 টাকা খরচ হয়। কৃষক ভালো লাভের সাথে একর প্রতি প্রায় ,০০,০০০ টাকা লাভ পায়। এইভাবে, এর চাষ খরচের 10 গুণ পর্যন্ত আয় দিতে পারে

করলা চাষের জন্য মাটি কেমন হওয়া উচিত

করলা চাষের জন্য বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো বলে মনে করা হয়। এছাড়া নদী তীরবর্তী পলিমাটিও এর চাষের জন্য ভালো।

করলা চাষের জন্য কত তাপমাত্রা প্রয়োজন?

করলা চাষে উচ্চ তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় না। এর ভালো উৎপাদনের জন্য, তাপমাত্রা 20 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে 40 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে হওয়া উচিত। এর চাষের জন্য জমিতে আর্দ্রতা বজায় রাখা প্রয়োজন।

বপনের জন্য করলার উন্নত জাত

বপনের জন্য করলার অনেক উন্নত জাত পাওয়া যায়। কৃষকরা তাদের এলাকা অনুযায়ী এটি নির্বাচন করতে পারেন। করলার উন্নত জাতগুলির মধ্যে রয়েছে হাইব্রিড লবুলি, টিয়া, প্যারট, কাকলি, তাজ-৮৮, গ্রিনস্টার, গৌরব, প্রাইড-, প্রাইড-, গ্রিন রকেট, হীরক, মানিক, জয়, রাজা, প্রাচী ইত্যাদি।   

করলা বপনের উপযুক্ত সময়

প্রসঙ্গত, করলা বারো মাস চাষ করা যায়। কারণ বিজ্ঞানীরা করলার এমন হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেছেন যেখান থেকে আপনি সারা বছরই করলার চাষ করতে পারবেন। আমরা এর বপনকে তিনটি উপায়ে ভাগ করতে পারি যা নিম্নরূপ।

  • গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য এটি জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বপন করা যেতে পারে।
  • সমভূমিতে, এটি জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত বর্ষাকালে বপন করা হয়।
  • পার্বত্য অঞ্চলে এটি মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বপন করা হয়।

  • করলার বীজ বপনের পদ্ধতি

করলা দুইভাবে রোপণ করা যায়। একটি বীজের মাধ্যমে সরাসরি জমিতে বপন করে এবং অন্যটি তার নার্সারি তৈরি করে। যখন চারা জমিতে বপনের উপযোগী হয়ে যাবে তখন বপন করতে হবে। আমরা নিচে করলা বপনের ধাপে ধাপে পদ্ধতিটি বলছি, যা নিম্নরূপ-

  • করলা ফসল বপনের আগে ক্ষেত ভালোভাবে চাষ করতে হবে। এরপর পা লাগিয়ে মাঠ সমতল করতে হবে।
  • এখন প্রায় দুই ফুট দূরে বিছানা তৈরি করুন।
  • এই বেডের ঢালের উভয় পাশে প্রায় 1 থেকে 1.5 মিটার দূরত্বে বীজ রোপণ করুন।
  • বীজ জমিতে প্রায় 2 থেকে 2.5 সেন্টিমিটার গভীর হতে হবে।
  • বীজ বপনের আগে এক দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর পর ছায়ায় শুকিয়ে বপন করতে হবে।
  • ক্ষেতের 1/5 অংশে পুরুষ পিতামাতার এবং 4/5 অংশে মহিলা পিতামাতার বিভিন্ন অংশে বপন করতে হবে।
  • ক্ষেতে করলার চারা রোপণের সময় নালা থেকে নালার দূরত্ব 2 মিটার, গাছ থেকে গাছের দূরত্ব 50 সেমি এবং নর্দমার উচ্চতা 50 সেমি হতে হবে।

করলার লতাকে সাপোর্ট দিন, ফল নষ্ট হবে না

করলা কাঠির আকারে অর্থাৎ গাছে জন্মে। এটি সমর্থন না করা হলে পুরো ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। করলা গাছ একটু বড় হলে কাঠ, বাঁশ, লোহার রড ইত্যাদি দিয়ে সাপোর্ট দিতে হবে যাতে করে নির্দিষ্ট দিকে বাড়তে পারে।

করলা চাষে সেচের প্রয়োজন

যাইহোক, করলা ফসলে কম সেচের প্রয়োজন হয়, জমিতে কেবল আর্দ্রতা থাকতে হবে।  জন্য হালকা সেচ দেওয়া যেতে পারে। ফুল ফল গঠনের পর্যায়ে হালকা সেচ দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন মাঠে যেন পানি জমে না থাকে। সেজন্য জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ফসল নষ্ট না হয়।

করলা ফসলে কখন নিড়ানি দিতে হবে

করলা ফসলের প্রাথমিক পর্যায়ে আগাছার প্রয়োজন হয়।  সময় এর গাছের সাথে সাথে অনেক অপ্রয়োজনীয় অন্যান্য গাছও জন্মায়।  জন্য ক্ষেতে আগাছা দেওয়ার পর এই গ্রাসকারী গাছগুলো তুলে ফেলে ক্ষেত থেকে দূরে ফেলে দিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় মাঠকে আগাছামুক্ত রাখলে করলার ভালো ফলন পাওয়া যায়।

করলা কখন কাটা হবে

করলার ফসল বপনের প্রায় 60 বা 70 দিনের মধ্যে তৈরি হয়। নরম ছোট পর্যায়ে ফল সংগ্রহ করতে হবে। ফল তোলার সময় খেয়াল রাখতে হবে করলার সাথে ডাঁটার দৈর্ঘ্য যেন সেন্টিমিটারের বেশি হয়। এতে ফলগুলো বেশিক্ষণ তাজা থাকে। করলা সবসময় সকালে তোলা উচিত।

করলা ফসলে খরচ লাভ

করলা ফসলে প্রতি একরে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক একরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কুইন্টাল উৎপাদন করা যায়। এভাবে এক একরে চাষ করে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা লাভ করতে পারেন কৃষক। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url