অভিজ্ঞতা

অভিজ্ঞতা

অবসর জীবনে কৃষি নিয়ে কিছু করবো ভেবে ৫ বন্ধু মিলে একটা কৃষি ফার্ম গঠন করেছিলাম। শুরুটা করেছিলাম ১০ বিঘার একটা জমি লিজ নিয়ে। বল সুন্দরী বড়ই বাগান করেছিলাম। এবার বাগানের ২য় বছর। সামগ্রিক অভিজ্ঞতা খুবই বাজে। এখন না পারছি বের হতে, না পারছি সামনে এগুতে। 

 বিগত দুই বছরের কৃষি অভিজ্ঞতা থেকে নতুনদের জন্য কিছু পরামর্শ দিচ্ছি।


১. কৃষি সম্পর্কে নিজস্ব কোন অভিজ্ঞতা/ধারনা না থাকলে এই কাজে ভুলেও জড়াবেন না। যদি ভাবেন অভিজ্ঞ কাউকে সাথে নিয়ে কৃষিতে বিনিয়োগ করবেন সেটা হবে চরম বোকামী।


২. অভিজ্ঞতা থাকলে নিজের এলাকাতেই জমি নিবেন। যে পন্য উতপাদন করবেন সেটার স্থানীয় চাহিদা কেমন সেটার তথ্য জেনে নিবেন। আন-কমন কোন ফসল করতে চাইলে সেটা কোথায় বিক্রি করবেন সেটা আগেই নিশ্চিত হয়ে নিবেন। কারো কথাতে, প্রলোভনে প্রভাবিত হয়ে কিছু করবেন না। উতপাদন থেকে বিপনন সম্পুর্ন প্রক্রিয়াটা আপনার নিজের হাতে থাকতে হবে।


৩. জমি নেবার পর সর্বপ্রথমে গুরুত্ব দিবেন জমির নিরাপত্তাকে। বেড়া নিয়ে অনেকে উদাসীন থাকে। কোন রকম ভাবে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিবেন না। একটা শক্ত, মজবুত বেড়া যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝা যায় ফলন আসার পরে। কাজেই বেড়ার পিছনে বার বার খরচ না করে শুরুতেই মজবুত দীর্ঘস্থায়ী বেড়া দিয়ে জমি ঘিরে নিন।


৪. ভুলেও ইউটিউব দেখে চাষের ধারনা নিবেন না। ইউটিউব দেখে জাত, চারা নির্বাচন করবেন না। ইউটিউবে চারা বিক্রেতা ৯৯%ই চিটার। চারার জন্য সরকারি বা বিভিন্ন এনজিও-র নার্সারিতে যোগাযোগ করবেন। নিজে দেখে, বুঝে চারার জাত নির্বাচন করবেন। 


৫. কোন সমস্যার সমাধান পেতে নিজে আশেপাশের অন্য বাগানী সেই সাথে কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিন। এলাকা ভিত্তিক রোগ বালাই দমন প্রকৃতি ভিন্ন হয়। ফেসবুকে সমাধান খুজবেন না। ফেসবুকের গ্রুপ গুলিতে সবাই বিজ্ঞানী। এখানে কার্যকর কোন সমাধান পাবেন না। এলাকা ভিত্তিক সমস্যার ধরন প্রকৃতি ভিন্ন হয়।


৬. বড় জমি হলে কখনো একই ফসল আবাদ করবেন না। জমিকে তিন/চারটা ভাগ করে এমন ধরনের ফসল নির্বাচন করুন যাতে করে প্রতি ২/৩ মাস পর পর ফসল বিক্রি করা যায়। যেমন, বাউন্ডারি ঘিরে হাইব্রিড পেপে/লেবু দিতে পারেন। পেপে/লেবু থেকে আপনার জমির দৈনিক খরচ চলে আসতে পারে। ফলের বাগান করতে গেলে এমন ফল নির্বাচন করুন যেগুলির ফুল আসার পর থেকে ফল হওয়া পর্যন্ত পরিচর্যায় ঝামেলা কম। যেমন, বড়ইয়ের ফুল আসার পর থেকে, ফল উত্তোলন, ফল তোলার পরের পরিচর্যা  অনেক বেশী ঝামেলার।


৭. ফলের বাগানে চারা রোপনের শুরুতেই পর্যাপ্ত পরিমান গ্যাপ রাখবেন যাতে গাছ বড় হওয়ার পরও বাগানে সহজে চলাচল করা সম্ভব হয়। নার্সারি ওয়ালাদের কথায় ঘন করে চারা লাগাবেন না। ওদের ধান্দা থাকে কিভাবে আপনার কাছে বেশী চারা বিক্রি করবে। প্লানিংটা নিজের মত করবেন। 


৮. জমিতে প্রচুর সময় কাটাবেন। লেবার কাজ করছে করুক। সাথে আপনিও করুন। নিজের হাতে প্রতিদিন অন্তত ৫ টা গাছের গোড়া আপনি নিজে পরিষ্কার করেন সেটাতেও অন্য রকম একটা তৃপ্তি পাওয়া যায়।


দুই বছর পর বুঝতে পারলাম আমাদের কৃষি প্রজেক্ট পুরোপুরি লস। 


আমাদের ভুল ছিলোঃ-

-নিজেদের কৃষি সম্পর্কে অজ্ঞতা। 

-পরের উপর নির্ভর শীলতা।

-নিজের এলাকার বাইরে জমি নির্বাচন করা।

- অজ্ঞতা, পরনির্ভরশীলতার কারনেই আজ ১০ বিঘার বল-সুন্দরী বড়ই বাগানটা একটা জংগল হয়ে আছে।

বের হবার পথ খুজছি এখন।

Helal












Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url