এপিজেনেটিক

 



এপিজেনেটিক


এপিজেনেটিক বিজ্ঞানের এক নতুন শাখা ও খুবই জটিল এবং এটা নিয়ে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। আমি যেহেতু এটা নিয়ে নিরক্ষর তাই ভুলভ্রান্তি হওয়া স্বাভাবিক এবং আমার মতো নিরক্ষরদের বোঝানোর জন্য সাধারণের ভাষাতেই চেষ্টা করছি।  তাই ভুল ত্রুটি তুলে ধরলে খুশি হবো।  


আমাদের ডিএনএর সিকোয়েন্সের পরিবর্তন না হয়ে জিনের কার্যপ্রণালীর যে পরিবর্তন হয় সেটাকেই এপিজেনেটিক পরিবর্তন বলে।  সাধারণভাবে এই পরিবর্তন গর্ভাবস্থা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে হয়  আবার পরিবেশ এর প্রভাবেও হতে পারে।  এখানে পরিবেশ বলতে খাবার ও খাবারে উপস্থিত জিন, পরিবেশ দূষণ,  মানসিক অবস্থা,  কাজ/ব্যায়াম, নেশা করা, জীবাণুর সংক্রমণ, প্লাস্টিক, সিন্থেটিক কাপড়,  সার-বিষ, ওষুধ, লিপস্টিক   প্রভৃতি ফ্যাক্টরকে বোঝানো হয়েছে।  


আমাদের শরীরের সমস্ত কোষে একই ধরনের ক্রোমোজম আছে।  তাহলে মস্তিষ্কের কোষ, হাড়ের কোষ, চামড়া কোষ বা রক্তকোষের মধ্যে এতো পার্থক্য কেন?  এর উত্তর হচ্ছে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ম অনুসারে  এপিজেনেটিক পরিবর্তন।  


শুক্রাণু ডিম্বাণুর মিলনের ফলে প্রথমে এককোষী ভ্রুন তৈরি হয়।  এই কোষ বারবার বিভাজিত ও সুনির্দিষ্ট এপিজেনেটিক পরিবর্তন এর জন্য আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ গড়ে ওঠে।  তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের বিকাশের সময় এপিজেনেটিক পরিবর্তন অনেক  বেশি হয় এবং দ্রুত হয়। এইসময় বিভাজনের মাধ্যমে কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি অতিদ্রুত হয় তাই কোনও একটা কোষের মধ্যে অনভিপ্রেত এপিজেনেটিক পরিবর্তন হলে বিভাজনের ফলে এইধরনের কোষের সংখ্যা অসংখ্য হয়ে যাবে,  ফলস্বরুপ  বাচ্চার উপর প্রভাব হবে মারাত্মক।  এই কারনেই গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের খাবার,  ওষুধ ও মানসিক শান্তিতে থাকা নিয়ে বিভিন্ন নিয়ম আছে।  এই কারনেই অপুষ্টিতে ভোগা মায়ের সন্তান জীবনভর বিভিন্ন রোগ ও অপুষ্টিতে ভোগে।  তাই ভারত সরকার গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিভিন্ন স্কিম চালু করেছে। 


এখন আমাদের আলোচ্য বিশয় সুনির্দিষ্ট নিয়মানুবর্তী  এপিজেনেটিক পরিবর্তন নয়,  আমাদের আলোচ্য বিশয় হচ্ছে অনভিপ্রেত এপিজেনেটিক পরিবর্তন।  এই অনভিপ্রেত এপিজেনেটিক পরিবর্তন উপরে লিখিত বিভিন্ন ফ্যাক্টরের কারনে হতে পারে। আমাদের জিনের সুনির্দিষ্ট নিয়মানুবর্তী এপিজেনেটিক এফেক্ট আমাদের বিবর্তনের ইতিহাসের খাদ্য,  জীবনশৈলী ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। এখন উপরে লেখা বিভিন্ন ফ্যাক্টর আমাদের বিবর্তনের ইতিহাস থেকে যত দূরে যাবে আমাদের ডিএনএ এর উপর ততোবেশি #অনভিপ্রেত  এপিজেনেটিক প্রভাব ফেলবে যদি সেই ফ্যাক্টর আমাদের শরীরের  সাপেক্ষে নিস্ক্রিয় ( যেমন প্লাটিনাম ধাতু)  না হয়।  এই কারনেই বিভিন্ন ধরনের নন ক্যমুনিকেবল ডিজিজ ( NCD) ডায়াবেটিস,  আর্থারাইটিস,  ক্যান্সার,  স্কিন সিরোসিস প্রভৃতি খাদ্যশস্য আবিষ্কারের আগে কম থাকলেও  এইসময় বেড়ে যায় কারন মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসে সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেটের অস্তিত্ব নেই  এবং বিগত ৭০ বছরে  রিফাইন্ড চাল, ফাস্টফুড,  অ্যান্টিব্যায়োটিক দিয়ে পালা ব্রয়লার মুরগী,  বিষ ও অনান্য কারনে NCD এর প্রভাব অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে।  এইসব প্রভাব আরও বাড়ার জন্য ভবিষ্যতে NCD অস্বাভাবিক বেড়ে যাবে।  

বিবর্তনের ইতিহাসে আমাদের শরীরে প্রচুর অ্যালুমিনা ( Al2O3) ঢুকেছে যেটা আমাদের শরীরের সাপেক্ষে নিস্ক্রিয় কিন্তু  শরীরের সাপেক্ষে সামান্য  সক্রিয়  Al বা বেশি  সক্রিয়  Al+++ ঢোকেনি।  তাই অ্যালুমিনিয়াম সামান্য ক্ষতিকারক কিন্তু AlCl3 যুক্ত কুল কুল ঠান্ডা ঠান্ডা পাউডার খুবই ক্ষতিকারক। তেমনি মহিলাদের লিপস্টিক ও বিভিন্ন প্লাস্টিকে উপস্থিত থ্যালেট যৌগ খুবই ক্ষতিকারক,  এই যৌগের ক্ষতিকারক প্রভাবের ফলে নিকট ভবিষ্যতে ( মাত্র ২০/৩০ বছরের মধ্যে)  অর্ধেক পুরুষ ডাক্তারের সাহায্য ছাড়া বাবা হতে পারবে না,  বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মিসক্যারেজের প্রধান কারণ এই থ্যালেট যৌগ।  এইরকম অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।


এইসব অনভিপ্রেত এপিজেনেটিক পরিবর্তন সাধারণত শরীরে  ইনফ্লেমেশন সৃষ্টি করে এবং এর ফলে বেশি  ইনফ্লেমেশনের সাথে যুক্ত জীবাণুর সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট রোগকেও ভয়াবহ করে তোলে। তাই বর্তমানের বাচ্চারা সহজেই সর্দিকাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগে আক্রান্ত হয়।  একই কারনে করোনা খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল অথচ যারা পুরনো আমলের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনশৈলীতে অভ্যস্ত তাদের মধ্যে করোনার প্রকোপ অনেক কম  হয়েছিল।  আপনি কখনও ভেবে দেখেছেন কেন করোনায় কোমর্বিড রুগীরা অটো ইম্যুইন রোগের রুগী?  কেন বিভিন্ন অটোইমিউন রোগের ওষুধ করোনার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়েছে? তাই করোনায়  ভারতের তুলনায় ভুটানে অস্বাভাবিক কম মৃত্যুর প্রধান কারণ এই অনভিপ্রেত এপিজেনেটিক পরিবর্তন কম হওয়া,  একই কথা F.I.A.M. গ্রুপের সক্রিয় সদস্যদের উপর লাগু হয়।


পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের অসংখ্য কোষে এপিজেনেটিক পরিবর্তন হওয়া একটা দীর্ঘ  সময়সাপেক্ষ ব্যাপার তাই বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ও তাদের পালতু বিজ্ঞানীরা নিজেদের প্রোডাক্টের ক্ষতিকর প্রভাব অস্বীকার করে জনগণকে সহজেই ভুল বুঝাতে পারে।  অবশ্য শরীরের কোনও নির্দিষ্ট অঙ্গের ক্ষতি হতে এর চাইতে কিছুটা কম সময় লাগে।  এরা কেউই ভ্রুণের উপর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে চায় না।  আমেরিকার সুগার লবি অসংখ্য বিজ্ঞানীকে পয়সা খাইয়ে চিনির ক্ষতিকর প্রভাব কয়েক দশক ধরে ফ্যাটের উপর ফেলেছে।  এই কারনেই গ্লাইফোসেটের ক্ষতিকর প্রভাব বায়ার অস্বীকার করছে যদিও ভ্রুণের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব সুস্পষ্ট।


আমার, অসীম দলুই   ও Jahangir Hossain ahangir Hossain এর পরিচিত একজন বাংলাদেশি যুবক একটা জেনেটিক রোগে আক্রান্ত হয়ে চলাফেরা করতে পারে না বললেই চলে অথচ একই জিন থাকা স্বত্ত্বেও তার মা বৃদ্ধ বয়সেও অনেক কম আক্রান্ত।  এর কারন হচ্ছে বর্তমানে এই অনভিপ্রেত এপিজেনেটিক পরিবর্তন হওয়ার অসংখ্য ফ্যাক্টরের বৃদ্ধি। 


এপিজেনেটিক পরিবর্তন রিভার্সিবল কিন্তু কিছু পরিবর্তন ৬ মাসে হতে পারে আবার কখনও কয়েক প্রজন্মও লাগতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডেনমার্কে  দুর্ভিক্ষে ভোগা গর্ভধারণ করা মহিলাদের তৃতীয়/চতুর্থ  প্রজন্মও এই কারনেই বিভিন্ন ধরনের রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।  তাই আপনার জীবনযাপন শুধুমাত্র আপনার নয় আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনকেও নিয়ন্ত্রণ করে।


এখন প্রশ্ন জিএম ফুডের নিরাপত্তা ও প্রকৃতিতে তার প্রভাব নিয়ে।  গবেষণায় এটা সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে জিন সর্বদা হজম হয়ে সহজসরল অ্যামিনো অ্যাসিডে পরিনত হয় না এবং কখনো টুকরো টুকরো হয়ে এমনকি গোটা জিনও শরীরে ঢুকে অনভিপ্রেত এপিজেনেটিক পরিবর্তন করতে পারে।  এছাড়াও অনেক বিজ্ঞানী তাড়াতাড়ি বয়স বাড়া ও পুরুষদের নপুংসকতা বাড়ার পিছনে জিএম ফুডকে সন্দেহ করেছেন।  তাই জিএম ফুড মানুষের  জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর এবং এই ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করবে বিবর্তনের ইতিহাসে এই জিন আমাদের শরীরে কি পরিমাণ ঢুকেছে।  যদি বিবর্তনের ইতিহাসে এই জিন নগন্য পরিমাণ ঢুকে থাকে তাহলে অকল্পনীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।  এখন কোনও জিন বিবর্তনের ইতিহাসে আমাদের শরীরে বেশি ঢুকে থাকলে মৌমাছি,  কীটপতঙ্গ,  বিভিন্ন পশুপাখির শরীরে বেশি ঢুকবে তার কোনও সম্পর্ক নেই।  তাই শুধুমাত্র মানুষ নয় অসংখ্য প্রজাতির উপর পরীক্ষা করার দরকার আছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url