আলু চাষ পদ্ধতি।

আলু চাষ পদ্ধতি।


আলু চাষ পদ্ধতি।

 আলু আবাদে কৃষক ভাইদের করণীয় ও লক্ষণীয়: 


 আলু চাষ পদ্ধতি। জলবায়ু:

আলু চাষের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা  ১৫°-২০° ডিগ্রি সে.


আলু চাষ পদ্ধতি। জমি নির্বাচন:

আlলু ফসল যে কোন মাটিতে হতে পারে। তবে আলু চাষের জন্য বেলে দো-আঁশ, দেআশ মাটি সবচেয়ে ভালো। জমি অবশ্যই রৌদ্র উজ্জ্বল হতে হবে। মাঝারি উচু ও উচু হতে হবে। যাতে সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে।


জাত নির্বাচন: 

কন্দাল ফসল গবেষণা ও বিএআরআই কতৃক উদ্ভাবিত জাত সমূহ আবাদ করা যেতে পারে।

আলুর উচ্চ ফলনশীল জাত সমূহ বারি আলু-৭ (ডায়ামন্ট), বারি আলু-৮ (কার্ডিনাল), বারি আলু-১১ (চমক), বারি আলু-১২ (ধীরা), বারি আলু-১৩ (গ্রানোলা), বারি আলু-১৫ (বিনেলা), বারি আলু-১৬ (আরিন্দা), বারি আলু-১৭ (রাজা), বারি আলু-১৮ (বারাকা), বারি আলু-১৯ (বিন্টজে) এবং বারি আলু-২০ (জারলা) বারি আলু-২৫ (এসটারিক্স), বারি আলু -২৯  বারি আলু ৩০ থেকে - বারি আলু-৯১, ( কারেজ), বারি টিপিএস-১, বারি টিপিএস-২ 


 আলু চাষ পদ্ধতি। জমি তৈরি: 

আলুর জমি কমপক্ষে আড়াআড়ি ভাবে ৪-৫ (ট্রাকটার) চাষ দিতে হবে। যাতে মাটিতে কোন ঢেলা না থাকে মাটি ঝুরঝুরে ও সমতল করে নিতে হবে।

বীজ সংগ্রহ ও পরিচর্যা: 

কোল্ড স্টোরেজ থেকে বীজ আলু বের করার পর ৪৮ প্রি হিটিং রুমে রাখতে হবে বীজ আলু বাড়িতে আনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে বস্তা খুলে ছড়িয়ে আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়ানের জন্য বাতাস চলাচল করে এমন ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। তা না হলে বস্তায় আলু ঘেমে পঁচে যেতে পারে।


বীজ শোধন:

যদি সম্ভব হয় আলু বীজকে কার্বক্সিল+থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক  ম্যাপভেক্স-৭৫ ডাব্লিউপি, ভিটাফ্লো-২০০ এফএফ, এসাভেক্স-৪০ ডাব্লিউপি প্রতি কেজি বীজের ৩.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করা যেতে পারে। 

অথবা  

প্রতি লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম বরিক এসিড মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট চুবিয়ে পরে ছায়াতে শুকাতে হবে। অথবা পলিথিন   সিটের উপর আলু ছড়িয়ে দিয়ে বরিক এসিড মিশ্রিত পানি স্প্রে করা যেতে পারে।


বীজের সাইজ/আকার:

আলু ফসলের জন্য ৩০-৪০ গ্রাম ওজনের আস্ত আলু বীজ হিসেবে উত্তম। কেটেও বীজ লাগানো যেতে পারে। আড়াআড়িভাবে না কেটে লম্বালম্বিভাবে কাটতে হবে যাতে কমপক্ষে প্রতিটি অংশে কমপক্ষে দুটি চোখ/কুঁড়ি থাকে। কাটা আলু ২-৩ দিন ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে।


আলু চাষ পদ্ধতি। আলু আবাদের উপযুক্ত সময়/মৌসুম: 

অক্টোবর মাসেও আলু রোপন করা যায়। তবে নভেম্বর মাস আলু লাগানোর উপযুক্ত সময়। নভেম্বরের পরে আলু রোপন করলে ফলন কমে যায়।

রোপেণ দূরত্ব: 

আস্ত আলুর সারির দুরত্ব ৬০ সে:মি: বীজের দুরত্ব ২৫ সে. মি. 

কাটা আলুর সারির দুরত্ব ৬০সে:মি: বীজের দুরত্ব১৫ সে: মি: 


বীজের হার:

হেক্টরে প্রতি ১.৫ টন। 

বিঘা প্রতি ২০০ কেজি

শতক প্রতি ৬ কেজি


সারের পরিমাণ: (বিঘা প্রতি)

ইউরিয়া ৩৩ কেজি

টিএসপি ২৬.৪ কেজি

এমওপি ২৮ কেজি

জিপসাম ১৬ কেজি

জিংক/দস্তা ৪৬ গ্রাম 

বোরন ১ কেজি

গোবর ১৩২০ কেজি


প্রতি শতকে)

ইউরিয়া ১০০০ গ্রাম 

টিএসপি ৮০০ গ্রাম 

এমওপি ৮৫০ গ্রাম

জীপসাম ৪৮৫ গ্রাম 

দস্তা ৪৬ গ্রাম 

বোরব ৩০ গ্রাম 

গোবর ৪০ কেজি


সার প্রয়োগ পদ্ধতি: 

গোবর ও জিংক সালফেট জমি তৈরির সময় মিশিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক ইউরিয়া সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও বোরন সার জমি তৈরির শেষ চাষে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ৩০-৩৫ দিন পর যখন আলুর নালা তৈরি করে মাটি তোলার সময় দিতে হবে।


গাছের গোড়ায় মাটি:

আগাছা পরিস্কার করে প্রথম ৩০-৩৫ গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া।

দ্বিতীয় দফায় ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া।


সেচ:

জমির ধরন অনুযায়ী দুই-তিন টি সেচ দিতে হবে 

প্রথম সেচ: বীজ আলু রোপনের ২০-২৫ দিনে

দ্বিতীয় সেচ: রোপনের ৪০-৪৫ দিনে

তৃতীয় সেচ: রোপনের ৬০-৬৫ দিনে

আলু উত্তোলনের দুই সপ্তাহ পূর্বে সেচ প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। 

আলুর দাদ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলুর জমিতে ৩০-৫০ দিনের মধ্যে কোন অবস্থায় সেচ/রসের ঘাটতি হতে দেওয়া যাবে না। 

এবং ৬০-৬৫ দিনের পরে জমিতে রসের আধিক্য হতে দেওয়া যাবে না। 


আগাছা দমন:

আলু রোপনের ৬০ দিন পর্যন্ত জমিতে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

হাম পুলিং: হামপুলিং হল গাছ টেনে উপড়ে ফেলা।  হালপুলিং এর ৭-১০ দিন পূর্বে সেচ বন্ধ করতে হবে। 


কিউরিং: হামপুলিং এর পর মাটি ও আলুর অবস্থার উপর নির্ভর করে ৭-১০ দিন পর্যন্ত মাটির নিচে রেখে আলুর ত্বক শক্ত করে নিতে হবে। 


সংগৃহীত পোষ্ট  কৃষি পরামর্শ  গ্রুপ

মোঃ মাজেদুল হক  

কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট তাজহাট, রংপুর 

মো: ফরিদুল ইসলাম 

উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা 

ব্লক: ভেটমারী, কালিগঞ্জ, লালমনিরহাট।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url