কুমড়ার চাষ


কুমড়ার চাষ।

কুমড়ার চাষ

 জাত নির্বাচনঃ

আমাদের দেশে একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন হয়েছে যা বার মাসই চাষ করা যায়। নাম তার বারি চাল কুমড়া-১। সম্প্রতি আমাদের দেশে হাইব্রিড জাতের চালকুমড়ার বীজও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসব জাতের মধ্যে #জালিরাজ, জুপিটার, ইউনিক, ভেনাস, পানডা, সুমাইয়া, বাসন্তী, নিরালা, মনি, দেব-১২০৩, মাধবী ইত্যাদি অন্যতম। 


মাটিঃ

প্রায় সব ধরনের মাটিতে চাল কুমড়া চাষ করা যায়। তবে চাল কুমড়া চাষের জন্য দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটি উত্তম। 


বপনের সময়ঃ

সারা বছরই চাল কুমড়ার চাষ করা যায়। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।

বীজের পরিমাণঃ

প্রতি শতাংশ জমিতে প্রায় ১৫-২০ গ্রাম বীজের দরকার হয়।


জমি তৈরি ও বীজ বপনঃ

চাল কুমড়া যদি বসতবাড়িতে করতে চান সেক্ষেত্রে ঘরের কোণে মাদা তৈরি করে তাতে ৩-৪টি বীজ বপন করতে হবে। এবং চারা গজালে ও একটু বড় হলে বাঁশের কঞ্চি বা পাট কাঠি চারার গোড়ায় পুঁতে দিয়ে চারাগুলো চালায় তুলে দিতে হবে। আর জমিতে চাষ করলে জমি ভাল করে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।

তারপর জমিতে মাদা তৈরি করে ৪-৫টি বীজ বপণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন বৃষ্টির বা বন্যার পানি জমে না থাকে।এরপর ২.৫ ফুট চওড়া ২ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করতে হবে। ২ থেকে ২.৫০ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করে বীজ বুনতে হবে।


সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

ইউরিয়া ১০০-১২০ কেজি/ একর

টিএসপি ৮০-১০০ কেজি/ একর

মিউরেট অব পটাশ ৫০-৬০ কেজি/ একর

জিপসাম ৩০-৪০ কেজি/ একর

জিংক অক্সাইড ৫-৮ কেজি/ একর

গোবর সার ৪-৫ মেট্রিক টন/ একর

ইউরিয়া সার বাদে অন্যান্য সব ধরণের সার বীজ বোনার ৫-৭ দিন আগে জমি তৈরি করার সময় মাদার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।


পরিচর্যার নিয়মঃ

প্রত্যেক মাদায় সুস্থ সবল ২-৩টি চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। নিয়মিত বিশেষ করে গাছের গোড়ার আগাছাগুলো পরিষ্কার ও গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে। জমির মাটিতে রস না থাকলে সেচ দিতে হবে। বর্ষার পানি নিকাশের জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে মাচা তৈরি করে দিতে হবে।


পোকমাকড় দমনঃ

চাল কুমড়া গাছে বিভিন্ন পোকার আক্রমন হয়। এসকল পোকার মধ্যে মাছি পোকা সবচেয়ে ক্ষতিকর। মাছি পোকার আক্রমনে চালকুমড়ার ফলন মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হয়। এই পোকা প্রথমে চাল কুমড়ার ফুলের মধ্যে ডিম পাড়ে, পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের ভেতর খেয়ে ফল নষ্ট করে ফেলে। এপোকার জন্য ফলন নষ্ট হয় ৫০-৬০ ভাগ।


তাই আমাদের কঠোরভাবে মাছি পোকা দমন করতে হবে। এই পোকা দমন করার প্রথম উপায় হচ্ছে-

পোকা দেখা মাত্র মেরে ফেলা।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা।

এ পোকা মারার ফাঁদ তৈরি করা এবং

বিষটোপ ব্যবহার করা।


ফসল সংগ্রহঃ

চাল কুমড়া গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে। চাল কুমড়া সবজি হিসেবে খেতে হলে সবুজ হুল যুক্ত ৪০০-৬০০ গ্রাম হলে তুলতে হবে। মোরব্বা বা বড়ি দেওয়ার জন্য পরিপক্ক করে ১২০-১৩০ দিন পর তুলতে হবে।

আমাদের দেশে চাল কুমড়ার চাষ করে অনেকেই দারিদ্র দূর করেছে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url