চাল


 

চাল

বর্তমানে আমাদের অসংখ্য রোগের নেপথ্য কারন চাল। সবাইকে ভাত কম খেতে বলা হয়, ডায়াবেটিস হলে খুবই কম খেতে বলা হয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রধান খাদ্য ছিল ভাত কিন্তু তারা আমাদের মতো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতো না। তাই আজকের আলোচনা চাল নিয়ে।

চালে প্রায় ১২% জল, ৭৫-৮০% কার্বোহাইড্রেট, ৪ থেকে ৯% প্রোটিন এবং প্রায় ০.২ থেকে ০.৯% ফ্যাট থাকে।

চালের উপরের স্তরে ফাইবার, ভিটামিন, পলিফেনল, মিনারেল, অ্যান্টি_নিউট্রিয়েন্ট প্রভৃতি থাকে। চালে ফাইবার প্রায় শূন্য ( বাজারের সাধারণ চাল) থেকে শুরু করে ১.৬ % ( ব্রাউন রাইস) পর্যন্ত হতে পারে। এই স্তরেই প্রোটিন ও ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। চালের যতো ভিতরে যাওয়া যায় ততই প্রোটিন ও ফ্যাটের পরিমাণ কমে এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বাড়ে।

এখন চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স নিয়ে আলোচনা করা যাক। চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স মাত্র ৩৯ থেকে শুরু করে ৮৪ ও হতে পারে। চালের কার্বোহাইড্রেটের স্টার্চ দুই রকমের অ্যামাইলোজ ও অ্যামাইলোপেকটিন। চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স এই অ্যামাইলোজের উপর নির্ভরশীল, অ্যামাইলোজ বাড়লে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম হয়। চালে অ্যামাইলোজ ২% ( স্টিকি বা আঠালো ভাত) থেকে ২৭% পর্যন্ত হতে পারে। তাই যে ভাত ঝরঝরে তার গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম হয়। যে চালে অ্যামাইলোজ বেশি থাকে সেগুলো সাধারণত লম্বা হয় কিন্তু সর্বদা সঠিক নয়।



ধান সিদ্ধ করলে ফাইবারের স্তর থেকে মিনারেল, ভিটামিন, পলিফেনল, লিপিড ( ফ্যাট) প্রভৃতি চালের ভিতরের দিকে চলে যায় অর্থাৎ চালের পুষ্টিগুণ বাড়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে অ্যামাইলোজ ও লিপিডের বন্ধনের ফলে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স অনেক কম হয়ে যায়। এছাড়াও ধান সিদ্ধ করার জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টি নিউট্রিয়েন্ট কিছুটা কমে যায়। তাই আতপ চালের তুলনায় সিদ্ধ চাল অনেক ভালো। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে সিদ্ধ করার আগে ধানকে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে যাতে জল ধানের একদম ভিতরের স্তরেও পৌঁছাতে পারে।

যেকোন বীজকে জার্মিনেশন করলে তাতে অ্যান্টি নিউট্রিয়েন্ট একদম কমে যায় এবং কিছু উপকারী যৌগ তৈরি হয়। তাই যদি ধানকে জার্মিনেশনে রেখে কল বের হওয়া শুরু হতেই সিদ্ধ করা হয় তাহলে খুবই ভালো হয়।

চালে ফাইবারের পরিমাণ বাড়লে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম হয়। এছাড়াও পলিফেনল, ভিটামিন, প্রোটিন, ফ্যাট, মিনারেলস আমাদের আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরি। তবে এইসবের পরিমাণ অনান্য খাদ্যশস্যের তুলনায় কম। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করলে চালের মধ্যে এইসব উপাদান বৃদ্ধি পায় এবং আর্সেনিকের পরিমাণ কম হয়।

ছোটবেলায় একজনের কাছে ভাতের বর্ণনা শুনেছিলাম -- "গাবের বীচির মতো শক্ত, ঝরঝরে ও একবার খেলে সারাদিন খিদে পায় না "। এর অর্থ হচ্ছে এই চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স খুবই কম।
তাই সবচেয়ে ভালো চাল হচ্ছে যাতে অ্যামাইলোজ বেশি আছে ( অর্থাৎ ঝরঝরে ভাত, বিন্দুমাত্র আঠালো নয়), ফুল ফাইবার, উপরে লেখা জার্মিনেশন পদ্ধতি অনুসরণ করা ও সিদ্ধ চাল।



এছাড়াও ভাত বানানোর পরে ফ্রিজে রেখে বা এমনিই ঠান্ডা করলে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম হয়।
এই ধরনের চাল ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারে। তবে চালের পুষ্টিগুণ সমস্ত খাদ্যশস্যের মধ্যে কম তাই অনান্য ধরনের খাদ্যশষ্যও গ্রহণ করা উচিত। বর্তমানে ডায়াবেটিস এর একটা অন্যতম কারন গমের গ্লুটেন ( কালো গমে গ্লুটেন নেই) । তাই এই ধরনের চাল, বিভিন্ন মিলেট ও কালো গম লোকজন খেলে শরীর ভালো থাকবে। উপরে লেখা পদ্ধতি অনুসারে তৈরি করা বাসমতী চালের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স বিভিন্ন চালের মধ্যে সবচেয়ে কম।

বাংলার অন্যতম সমস্যা ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহারের কারনে জমির মাটিতে বছরের পর বছর আর্সেনিক জমা হওয়া এবং সেটা বিভিন্ন ফসলের মাধ্যমে শরীরে ঢোকা। যেহেতু ফাইবারের স্তরে আর্সেনিক সবচেয়ে বেশি থাকা তাই এইসব অঞ্চলে উৎপাদিত ধানের চালে ফাইবার রাখলে সেটা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই বর্ষাকাল ছাড়া সর্বত্র ধানচাষ নিষিদ্ধ করাই একমাত্র উপায়।


Rashed Hasan

Jhenida, Dhaka, Bangladesh


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url