আমন ধানের বীজ বপনের।
এখন সময় আমন ধানের বীজ বপনের। তাই বীজ বপনের আগে জমির ধরন অনুযায়ী আমন ধানের
*জাত নির্বাচন,
*বীজতলার জমি নির্বাচন,
*ধানের বীজ গজানোর জন্য করনীয়
*বীজ বাছাই,
*বীজ শোধন,
*বীজ জাগ দেওয়া,
*বীজ বপনের সময়
*চারার বয়স
চারা রোপনপর সঠিক সময়
সহ উপরি উক্ত বিষয় গুলো লক্ষ্য করা উচিত।
**জীবনকাল অনুসারে
**দীর্ঘমেয়াদি জাত (জীবনকাল ১৩৫ দিনের বেশি): বিআর-১০, বিআর-১১, ব্রি ধান-৩০, ব্রি ধান-৪০, ব্রি ধান-৪১, ব্রি ধান-৪৪, ব্রি ধান-৫১।
**মধ্যম মেয়াদি জাত (জীবনকাল ১২০-১৩৫ দিন): বিআর-২৫, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৩৭, ব্রি ধান-৩৮, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫২, ব্রি ধান-৭০, ব্রি ধান-৭২, ব্রি ধান-৭৯, ব্রি ধান-৮০, ব্রি ধান-৮৭ ব্রি ধান-৯৩, ব্রি ধান-৯৪, ব্রি ধান-৯৫
**স্বল্পমেয়াদি জাত (জীবনকাল ১২০ দিনের কম):
রবি ফসল এলাকায় স্বল্পমেয়াদি জাত যেমন- ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৯, ব্রি ধান-৫৬, ব্রি ধান-৫৭, ব্রি ধান-৬২, ব্রি ধান-৬৬, ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭৫ চাষ করে সহজেই ধান কাটার পর রবি ফসল করা যাবে।
**নতুন উদ্ভাবিত আমনের জাত ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭২, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৭৯, ব্রি ধান-৮০ এবং ব্রি ধান-৮৭ জাতগুলো চাষ করে প্রতিনিয়ত উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
**প্রিমিয়াম কোয়ালিটি (সুগন্ধি জাত) ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান- ৭৫, ব্রিধান-৮০, ব্রি ধান-৯০
**যেসব এলাকায় আগাম সবজি চাষ হয়। সেখানে জমি পতিত না রেখে স্বল্প জীবনকালীন জাত যেমন ব্রি ধান-৫৭, ব্রি ধান-৬২, ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭৫, বিনা ধান-১৬, বিনা ধান-১৭
**আমন মৌসুমে হাইব্রিড জাত হিসেবে ব্রি হাইব্রিড ধান-৪, ব্রি হাইব্রিড ধান-৬, বিএডিসি হাইব্রিড ধান-২, ধানী গোল্ড, এরাইজ এজেড-৭০০৬, হীরা-১০, সুর্বণা-৮, মুক্তি -১, এগ্রো ধান-১২
**এছাড়া বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৪৬ জাতগুলোর নাবি গুণ থাকার জন্য এদের বীজ চারা জরে সর্বশেষ ৩১ ভাদ্র পর্যন্ত বন্যা প্রবণ এলাকায় রোপণ করা যায়।
**লবণাক্ত এলাকায় বিআর-২৩, ব্রি ধান-৪০, ব্রি ধান-৪১, ব্রি ধান-৫৩, ব্রি ধান-৫৪, ব্রি ধান-৭৩, ব্রি ধান-৭৮।
**জলাবদ্ধ এলাকার জন্য উপযোগী জাত- বিআর-১০, বিআর-২৩, ব্রি ধান-৩০, ব্রিধান-৫২, ব্রি ধান-৭৯, ব্রি ধান-৭৬, ব্রি ধান-৭৮
**এছাড়া সুগন্ধি ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধাব-৭০, ব্রি ধান-৮০, ব্রি ধান-৯০
*-বীজ গজানোর জন্য করনীয়:
নিজেদের সংরক্ষণ করা বা বাজার থেকে কেনা ধানের বীজ বস্তা থেকে বের করে তিন-চার ঘন্টা রৌদ্রে শুকিয়ে তারপর ছায়ায় রেখে স্বাভাবিক ঠান্ডা করতে হবে।
**বীজ বাছাই করার নিয়ম:
**পরিস্কার ১০ লিটার পানিতে ৩৭৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে ১০ কেজি ধানের বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে দিতে হবে।
এতে পুষ্ট ধানের বীজ পানির নিচে ডুবে জমা হবে। এবং অপুষ্ট হালকা বীজ পানির উপরে ভেসে উঠবে।
ভাসমান বীজ গুলো হাত বা চালনি দিয়ে সরিয়ে পানির নিচের পুষ্ট ধানের বীজ গুলো তুলে পরিস্কার পানি দিয়ে ৩-৪ বার ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
ইউরিয়া মিশানো পানি সার হিসেবে বীজতলায় ব্যবহার করা যাবে।
**বীজ শোধন:
বাছাইকৃত পুষ্ট বীজ সমূহ প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম হারে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক / ট্রাইকোডার্মা মিশিয়ে ১ কেজি ধানের বীজ ১২ ঘন্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে বীজ জীবানু মুক্ত হয়।
*জাগ দেওয়া:
শোধনকৃত বীজ সমূহ চটের বস্তায় ২৪ ঘন্টা রেখে দিলে অঙ্কুর বের হবে। এর পরে বীজতলায় বীজ বপন করা যেতা পারে।
*বীজতলা নির্বাচন:
চারিদিকে খোলা, রৌদ্র ও সেচসুবিধাযুক্ত জমিতে বীজতলা তৈরী করা উচিৎ। ছায়াযুক্ত বীজতলায় ধানের চারা লম্বা ও লিকলিকে হয়ে যায় এবং চারা রোগাক্রান্ত হতে পারে।
*আদর্শ বীজতলা তৈরী:
আগাছা পরিস্কার করে। জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে দৈর্ঘ্য ৩ মিটার অথবা জমির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী এবং প্রস্থ ১ মিটার সাইজের বীজতলা তৈরী করতে হবে।
*প্রতি দুই বেডের মাঝে ৩০ সেমি নালা/ফাঁকা রেখে সেখান থেকে মাটি উঠিয়ে বীজতলা উঁচু ও সমান করে নিতে হবে। যাতে চারা গজানোর পর বীজতলার মাঝখান দিয়ে চারায় সেচ ও অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা করা সহজ হয়।
*আর্দশ বীজতলা তৈরি করে প্রতি বর্গ মিটারে ৮০-১০০ গ্রাম ধানের বীজ বপন করা উচিৎ।
এক শতক বীজতলার চারা দিয়ে ২০ শতক জমিতে চারা রোপণ করা যায়।
বীজতলা থেকে চারা উঠানোর ৭-১০ দিন পূর্বে প্রতি শতক বীজতলার জন্য ২৮০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিয়ে তাতে হালকা পানি সেচ দেয়া যেতে পারে। এতে করে উৎপাদিত শক্ত-সবল চারা রোপনের পর সহজে, অল্প সময়েই মাটিতে শিকড় গেড়ে লেগে যায়, চারা নষ্ট হয় না।
চারার বয়স:
আমন মৌসুমে ২৫-৩০ দিনের চারা রোপন করা উচিত।
প্রতি গুছিতে ২-৩ টি করে চারা এবং ২-৩ সেমি গভীরতায় চারা রোপণ করতে হবে।
চারা রোপনের সঠিক সময়:
আমন মৌসুমে ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত ধানের চারা রোপনের আদর্শ সময়।
*চারার দুরত্ব:
আমন মৌসুমে চারা থেকে চারা ২০ সেমি:
সারি থেকে সারি ২০ সেমি: দূরে দূরে সারি করে ধানের চারা রোপণ করা উচিৎ। সারিতে রোপণ করে ধানের ফলন ১৫-২০% বৃদ্ধি হতে পারে, অন্যান্য অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা করা সহজতর হয়, ব্যয় সাশ্রয় হয়।