একটি দেশি গরু
আজ থেকে প্রায় ৬/৭ বছর আগে আব্বা বাজার থেকে একটি দেশি গরু৩৪ হাজার টাকায় কিনেছিল।
বাড়িতে নিয়ে আসার পর বুঝতে পারি বাছুরটি অন্ধ।
অন্ধ বলে সবাই বাছুরটাকে খুব আদরযত্ন করতো,যেহেতু চোখে দেখে না। বাড়ির সবাই দেখে দেখে রাখতো।তার উপর ছিল পানিতে পড়ার ভয়।(কয়েকবার পরে ও ছিল)
আস্তে আস্তে সেই বাছুরটি বড় হতে লাগলো। একসময়
আব্বা সিদ্ধান্ত নিলো এটা বিক্রি করে দিবে।
অন্ধ বলে সবাই দাম কম বলতো,
আর অন্ধত্বের কারনে কুরবানিতে ও কাজে লাগানো যাচ্ছিলো না।
পরে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে হিটে আসার পর বীজ দিয়ে দিলো।
প্রথম বছর;শাহিওয়াল
দ্বিতীয় বছর;হলেস্টিন ফ্রিজিয়ান
তৃতীয় বছর ও হলেস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের তিনটি বাছুর এই অন্ধ গরুটি জন্ম দিয়েছে।
তৃতীয় বছরের, হলেস্টিন ফ্রিজিয়ান বাছুরটি ছিল একটু অন্যরকম।
বাছুরটির বয়স যখন মাত্র ৩/৪ মাস তখন থেকেই এটার কাছে কাউকে যেতে দিতো না। খালি ঢুসা দিতো।
গলায় হাত বুলিয়ে আদর করলে ও শান্ত থাকতো না।
শুধু মাত্র আমার আম্মার সাথে শান্ত থাকতো।
একবার ছুটে গেলে ধরতে গেলে ঘাম ঝরিয়ে দিতো, এত পাগলা ছিল।
বয়সের ব্যবধানে অনেক বড়/স্বাস্থ্যবান হয়ে গিয়েছিল।
(শুধুমাত্র ভাতের মার, কাচা ঘাস, খড়,মাঝে মাঝে পানির সাথে সামান্য ভূষি দেয়া হতো)
দেখতে দেখতে বাছুরটির বয়স ৮ মাস হয়ে গেলো।
এবার, একজন আমার আব্বাকে বললো, বাছুরটিকে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর জন্য।
উনার কথায় বাজারের একজন পশু ডাক্তার থেকে একটি কৃমির ট্যাবলেট নিয়ে বাছুরটিকে খাওয়ালো।
😓😓😓😓
ট্যাবলেট খাওয়ানোর পরদিন থেকেই বাছুরটি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিতে লাগলো।
২/৩ দিন পর আস্তে আস্তে শুকাতে লাগলো।
পশু ডাক্তারকে দেখিয়ে ইনজেকশন+ঔষধ খাওয়াতে লাগলো।
১০/১২ দিনের মাথায় বাছুরটি ওঠাবসা বন্ধ করে দিলো প্রায়।
শরির শুকিয়ে এমন অবস্থা হয়ে গিয়েছিল যে,............লিখে বুঝাতে পারবো না 😭😭😭
২০/২২ দিনের মাথায় আবার নতুন সরকারি ডাক্তারকে নিয়ে আসলো।
সকালবেলা ডাক্তার এসে কিছুক্ষন দেখে ৩ টা ইনজেকশন করলো।
প্রথমটা করার পর পা গুলো টানা দিয়ে জিবটা বের কেমন যেন করলো।
ডাক্তার ঔষধ লিখে চলে যাওয়ার ২০ মিনিট পর গরুটিকে একপাশ থেকে অন্যপাশে করতে গিয়ে দেখি নড়াচড়া একেবারে বন্ধ।
নিশ্চিত হলাম সে আর বেচে নেই।
এটা থেকে একটা জিনিস শিখতে পারলাম,
ক্ষমতা চিরদিন থাকে না।আজকে আমার সবকিছু করার ক্ষমতা আছে, আগামীকাল না ও থাকতে পারে।
যে বাছুরটির সামনে...........