বীজ

 
বীজ

বীজ বিষয়ক আলোচনা

প্রশ্ন: বীজ কী?

উত্তর: বীজ হলো নিষিক্ত ডিম্বকের পরিণত রূপ। অর্থাৎ পরিণত নিষিক্ত ও পরিপক্ব ডিম্বককে বীজ বলে। যেমন- ছোলা বীজ, ডাল বীজ, শিম বীজ ইত্যাদি।

বীজ বিধিমালা ভিত্তিক শ্রেণি বিভাগ :

বাংলাদেশের বীজ বিধিমালা ১৯৯৮ (The Seed Rules,1998) মোতাবেক বীজের ৪ (চার) টি শ্রেণি বিভাগ করা হয়েছে।

মৌল বীজঃ-

উদ্ভিদ প্রজন্ম বিজ্ঞানীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বংশগত গুণাগুণ সম্পন্ন যে বীজ উৎপাদন করা হয়, তাকে মৌল বীজ বলে।

ভিত্তি বীজ (Foundation Seed) :

প্রজননবিদের বীজের পরবর্তী স্তর ভিত্তি বীজ যা বীজ প্রযুক্তিবিদদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে উৎপাদন করা হয়। আমাদের দেশে মূলত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করর্পোরেশন তাদের নির্ধারিত খামারে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভিত্তি বীজ উৎপাদন করে।

প্রত্যয়িত বীজ (Certified Seed) :

ভিত্তি বীজ থেকে প্রত্যয়িত বীজ উৎপাদন করা হয়। বিএডিসির নিজস্ব খামার সমূহে এবং কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোন সমূহে প্রত্যয়িত বীজ উৎপাদিত হয়।

মান ঘোষিত বীজ (Truthfully Labelled Seed) :

ভিত্তি বীজ বা প্রত্যয়িত বীজ থেকে মান ঘোষিত বীজ উৎপাদন করা হয়। বিএডিসি কৃষক পর্যায়ে বিপণনের জন্য যে বিপুল পরিমাণ বীজ উৎপাদন করে তা এই শ্রেণির।


ভালবীজের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?


কোন বীজকে ভাল ও উন্নত বলতে হলে তাকে অবশ্যই নিম্নোক্ত গুণাবলী বিশিষ্ট হতে হবে :
(১) বীজ উন্নত জাতের এবং অধিক ফলনশীল হতে হবে।
(২) বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা শতকরা ৯০ ভাগ বা তারও অধিক হতে হবে।
(৩) বীজকে স্বাভাবিক আকার, ওজন, আকৃতি ও রং সমরূপের হতে হবে।
(৪) বীজকে সুপরিপক্ক, সুপুষ্ট ও নিটোল হতে হবে। (৫) বীজ যেন কীটদ্রষ্ট ও রোগাক্রান্ত না হয়।
(৬) বীজ যেন ঘাস বা অন্যান্য আগাছা মুক্ত থাকে। (৭) বীজ যেন অপর জাতের বীজের সাথে মিশ্রিত না হয়।

বীজের গুরুত্ব (Importance of seed) :


শস্য উৎপাদনে বীজের গুরুত্ব অপরিসীম। ফসল উৎপাদনের ব্যয়ের খুব সামান্য অংশই ব্যয় হয় বীজের জন্য। অথচ ফসল ভেদে বীজ এককভাবে ফলন এবং উৎপন্ন পণ্যের গুণাগুণে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। তাই ফসল উৎপাদনে বীজকে একটি মৌলিক উপকরণ বলা হয়।

(ক) বীজ শস্য উৎপাদনের জন্য একটি অন্যতম মৌলিক উপকরণ হিসাবে কাজ করে।
(খ) উন্নত জাতের বীজ উৎপাদিত পণ্যের গুণাগুণ বহুগুণে বৃদ্ধি করে.
(গ) উত্তম বীজ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
(ঘ) উত্তম বীজ পরোক্ষভাবে শস্য উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলকভাবে কমায়।
(ঙ) বিশুদ্ধ বীজ রোগ, পোকামাকড় ও আগাছা বিস্তার রোধ করে, ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
(চ) বীজ কখনো কখনো শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
(ছ) বীজ মানুষ ও পশু-পাখীর জীবন ধারনের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
(জ) বীজ ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি অন্যতম উপকরণ।
(ঝ) বীজ কখনো কখনো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করে।

উন্নতমানের বীজের বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্নরূপ :


বাহ্যিক চেহারা হবে উজ্জ্বল, সুন্দর, আকার, আয়তন ও জৌলুস ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
বীজে কোন নিষ্ক্রিয় পদার্থ (Inert Material) বালি, পাথর, ছোট মাটি, ভাঙ্গা বীজ, বীজের খোসা ইত্যাদি থাকবে না।
বীজে হতে হবে বিশুদ্ধ (Pure Seed)।
বীজের ক্ষতিকর আগাছার বীজ (Obnoxious weed seed) থাকবে না।
বীজ হতে হবে পুষ্ট। আকার, আয়তন, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ওজন, জাত অনুযায়ী নির্দিষ্ট থাকতে হবে।
বীজের আর্দ্রতা নির্ধারিত মাত্রায় থাকতে হবে।

বীজের ট্যাগ জেনে নিন:

ট্যাগ ৪ ধরনের -

১)প্রজনন বীজের ট্যাগের রং=সবুজ
২)ভিত্তি--------------------------=সাদা
৩)প্রত্যায়িত----------------------=নীল
৪)মানঘোষিত--------------------=হলুদ


রগিং কাকে বলে?

রগিং অর্থ হচ্ছে আকাঙ্খিত বীজের গাছ ছাড়া আগাছাসহ অন্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত গাছ জমি থেকে শিকড়সহ তুলে ফেলা।

রগিং এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ-
ক) বিজাত বা অন্যজাত তুলে ফেলা
খ) জাতের বিশুদ্ধতা ঠিক রাখা
গ) ক্ষতিকারক আগাছা দমন করা
ঘ) অন্য ফসলের গাছ নির্মূল করা
ঙ) রোগমুক্ত ফসলের গাছ সরিয়ে ফেলা। এ অবস্থায় ফসলের জমির সর্বত্র ঘুরে ফিরে বিভিন্ন সময়ে রগিং করা উচিত। ফসলভেদে রগিং ২ থেকে ৪ বার করা উচিত।

রগিং করা হয় কেন?

রগিং অর্থ হচ্ছে আকাঙ্খিত বীজের গাছ ছাড়া আগাছাসহ অন্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত গাছ জমি থেকে শিকড়সহ তুলে ফেলা।
বীজের জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য রগিং করতে হয়। ফুল আসার আগেই অনাকাঙ্ক্ষিত গাছ রগিং করা ভালো।

বীজকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবিভাগ করা যায়ঃ-


(ক) বীজপত্রের সংখ্যা অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ :

(১) একবীজপত্রী বীজ :

বীজপত্রের সংখ্যা একটি হলে সেই বীজকে এক বীজপত্রী বলে। যেমন- ধান, গম, ভূট্টা, খেজুর, নারিকেল, কলা, তাল, বাঁশ, সুপারি, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি।

(২) দ্বিবীজপত্রী বীজ :

বীজপত্রের সংখ্যা দুইটি হলে সেই বীজকে দ্বিবীজপত্রী বলে। যেমন-লাউ, কুমড়া, মটর, ছোলা, আম, জাম, তেঁতুল, কাঁঠাল, পাট, রেড়ী, কার্পাস, তামাক, সরিষা, বেগুন, টমেটো, গোল আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুগ, মুলা, সয়াবিন ইত্যাদি।

(খ) বীজের বহিরাবরণের উপস্থিতি ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ :

(১) নগ্নবীজ :

বীজে কোন আবরণ থাকে না; যেমন- গম, ভূট্টা ইত্যাদি।

(২) আবৃত বীজ :

বীজে আবরণ থাকে; যেমন- ডাল বীজ, তেল বীজ, ধান বীজ ইত্যাদি।

গ) ভ্রূণের সংখ্যা ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ :

1) একটি ভ্রূণ বীজ:

বীজ শুধুমাত্র একটি ভ্রূণ ধারণ করে; যেমন ধান, গম, পাট ইত্যাদি।

(2) একাধিক ভ্রূণ শিলা:

বীজ অনেক ভাজা আছে; যেমন- নারকেল, তাল, আম ইত্যাদি।
ঘ) ব্যবহার ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ

(১) উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ :

এক বা একাধিক বীজত্বক দ্বারা পরিণত ভূণকে বীজ বলে। যেমন- ডাল বীজ, তেল, বীজ, ধান, গম, ভূট্টা ইত্যাদি।

(২) কৃষিভিত্তিক বীজঃ

গাছের যে কোন অংশ যেমন- ডালা, মূল, পাতা, কুড়ি ইত্যাদি যা দ্বারাই এর বংশবৃদ্ধিকরা সম্ভব তাকেই কৃষিবীজ বলে।

(ঙ) নিষিক্ততা ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ :

(১) নিষিক্ত বীজ :

ডিম্ব কোষ পুংরেণু দ্বারা নিষিক্ত হলে নিষিক্ত বীজ উৎপন্ন হয়।

(২) অনিষিক্ত বীজঃ

ডিম্বকোষ কোন কোন উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পুংরেণু কর্তৃক নিষিক্ত না হয়েই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং বীজ উৎপন্ন করে। তাই এই জাতীয় বীজকে অনিষিক্ত বীজ বলে।

ধন্যবাদ সকলকে


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url