নাশপাতি
নাশপাতি।
নাশপাতি মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। তবে এর কোন কোন প্রজাতি বা জাত অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায়ও জন্মানো যায়। এটি বিদেশি ফল হলেও আমাদের দেশে কম বেশি সবাই ফলটির সাথে পরিচিত। বিদেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে নাশপাতি আমদানি করা হয়। দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ ফলের চাষ করা সম্ভব।
নাশপাতির গাছ খাড়া ও অল্প ঝোপালো। চৈত্র মাসে গাছে ফুল আসে এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফল আহরণ করা যায়। ফলের গড় ওজন ১৩৫ গ্রাম, আকার ৮.৪০ সেমি দ্ধ ৫.৬৩ সেমি। ফল বাদামী রঙের, ফলের উপরিভাগের ত্বক সামান্য খসখসে। শাঁস সাদাটে, খেতে কচকচে ও সুসাদু । গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৬০-৭০টি। জাতটি চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাসমূহে চাষ উপযোগী।
রোপণ ও পরিচর্যা: সাধারণত সমতল ভ‚মিতে বর্গাকার এবং পাহাড়ের ঢালে কন্টুর রোপণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যস্ত চারা লাগানোর উত্তম সময়। তবে সেচ সুবিধা থাকলে সারা বছরই চারা লাগানো যায়।সারি থেকে সারি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪ মিটার। এ হিসেবে প্রতি হেক্টর জমিতে ৬২৫টি চারা দরকার হয়।মাদা তৈরি করার পর তাতে ১৫-২০ দিন পর চারা বা কলম লাগাতে হয়। গর্তের ঠিক মাঝখানে চারা লাগাতে হবেতারপর খুঁটি দিয়ে চারাটি বেঁধে দিতে হবে যাতে হেলে না পড়ে। চারা লাগানোর পর চারার গোড়ায় ঝাঝরী দিয়ে পানি দিতে হবে। প্রয়োজনে বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আগাছা দমন: গাছের পর্যাপ্ত বৃদ্ধি ও ফলনের জন্য সবসময় জমি পরিষ্কার বা আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বিশেষ করে গাছের গোড়া থেকে চারদিকে ১ মিটার পর্যস্ত জায়গা সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
সেচ ও নিষ্কাশন: চারা রোপণের পর ঝরনা দিয়ে বেশ কিছু দিন পর্যস্ত সেচ দিতে হয়। সর্বোচ্চ ফলনের জন্য ফুল আসাও ফলের বিকাশের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা আবশ্যক। এ জন্য খরা মৌসুমে সেচ দেয়া প্রয়োজন। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমতে না পারে সে জন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ডাল ছাঁটাইকরণ: গাছের উচ্চতা ৪০-৫০ সেমি হলে ডগা ভেঙ্গে দিতে হবে। পরের বছর পার্শ্ব শাখা ২০-২৫ সেমি রেখে কেটে দিতে হবে। গাছের গোড়ার দিকে জল/শোষক শাখা বের হলে কেটে ফেলতে হবে। গাছ বড় হলে ডালগুলো ভূমির দিকে বাঁকা করে দিলে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
ডাল নুয়ে দেয়া: নাশপাতির খাড়া ডালে নতুন শাখা ও ফল কম হয়। এ জন্য খাড়া ডাল ওজন অথবা টানার সাহায্যে নুয়ে দিলে প্রচুর সংখ্যক নতুন শাখা গজায়। এতে ফলন ও ফলের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
ফল সংগ্রহ ও ফলন: মার্চ-এপ্রিল মাসে গাছে ফুল আসে। জুলাই মাসের শেষ পক্ষে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। ফল অতি সাবধানে সংগ্রহ করা প্রয়োজন যাতে মাটিতে না পড়ে। কারণ আঘাতপ্রাপ্ত ফল সংরক্ষণ করা যায় না। ফল সংগ্রহের পর সংরক্ষণের জন্য ভালভাবে বাছাই করা দরকার যাতে কোনরূপ ত্রটিযুক্ত ফল না থাকে। তারপর কাগজ বা কাঠের বাক্সে করে বাজারজাত করা উত্তম। এভাবে ১০-১২ দিন পর্যস্ত ফল সংরক্ষণ করা যায়। গাছের বয়স ও আকারভেদে নাশপাতির ফলনে তারতম্য ঘটে। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে ২০ - ৪০ কেজি পর্যস্ত ফল সংগ্রহ করাযায়।
ধন্যবাদান্তে
অমিন
কৃষি পরামর্শ Group