পেরিলা চাষ
পেরিলা চাষ।
তেল বীজ জাতীয় সবজি পেরিলা। বাংলাদেশে এই প্রথম স্বীকৃতি পেল নতুন ভোজ্য তেল ফসল পেরিলা। পেরিলার বৈজ্ঞানিক নাম Perilla Frutescence। পেরিলার আদি নিবাস চীন দেশে হলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় এর বিস্তৃতির কারণে এটি কোরিয়ান পেরিলা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। পেরিলা বীজে তেলের পরিমাণ ৪০/৪২ শতাংশ। এই তেলে ৫০-৬৫ ভাগ ওমেগা, ও ৩ ফেটিএসিড ও ৯১ শতাংশ অসম্পৃক্ত ফেটিএসিড থাকে। সেই কারণে এই তেল মনব শরীরের জন্য বেশ উপকারী। পেরিলার পাতা সবজি হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
পেরিলা চাষ করে আমাদের দেশে ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইস.এম.এম. তারিখ হোসাইন ২০০৭ সালে কোরিয়া থেকে পেরিলার বীজ সংগ্রহ করে, গবেষণা শুরু করেন। তিনি এই ফসলে বাংলাদেশে চাষ সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করেন। প্রফেসর তারিখ হোসাইনের তত্ত্বাবধানে তার পিএসডি ফেলু, আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার পেরিলা নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে গবেষণা করছেন। তার গবেষনায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে জাতীয় বীজ বোর্ড, পেরিলার একটি জাত চাষ করার জন্য ২০২০ সালে অবমুক্ত করেন।
পেরিলা: দেশের কৃষকরা এখনো এই ফসলের সাথে খুব একটা পরিচিত নন। অথচ বিশ্বের উৎকৃষ্ট ভোজ্য তেল উৎপাদিত হয়, পেরিলার বীজ থেকে। এই দেশে এই বীজ উৎপাদন নিয়ে গত বছর ধরে চলছে গবেষণা। এই ধারাবাহিকতায় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলাসহ দেশে ১০টি কৃষি অঞ্চলে মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ হয়েছে। এর ফলে ফলনও ভাল দেখা যাচ্ছে। জুলাই থেকে অক্টোবর মৌসুমে অনেক উচু জমি খালি পড়ে থাকে এই সময়টা জানা যায় যে, পেরিলা চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। ফলে দেশে তেল বীজ উৎপাদনের পাশাপাশি, আর্থিকভাবে কৃষকরা লাভবান হবেন এই পেরিলা চাষে। গবেষনায় বলছেন, বাংলাদেশের আবহাও হেক্টর প্রতি দেড় টন বেশি উচ্চ, গুনগত পেরিলার মানসম্পন্ন পেরিলার উৎপাদন পাওয়া গেছে। এতে উচ্চ মাত্রায় ওমেগা ৩ রয়েছে, যা হৃদরোগ, ত্বকসহ ডায়বেটিসের উচ্চ মাত্রায় ঔষধ। কৃষি অধিদপ্তর পেরিলাকে দেশের নতুন ফসল হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে।
পেরিলা তেলের উপকারী দিকগুলো :
১। এটি স্টোমাচে ব্যাথা প্রশ্বাস, হাঁপানি, কাশি এবং মাংসপেশীর কোষ দূর করতে ব্যবহৃত হয়।
২। এটি অকাল ত্বকের মেরামত করে।
৩। এটি মাথার ত্বক এবং চুলকে সুরক্ষিত পুষ্টি জোগায়।
৪। এটি চুলকানি এবং ত্বকের ফোলা ভাব থেকে মুক্তি দেয়।
৫। এটি মেমরি সমস্যা এবং কোলন ক্যান্সারের মত পরিস্থিতি প্রতিরোধ করে।
৬। এটি বাচ্চাদের পাশাপাশি বড়দের স্মৃতিশক্তি এবং শেখার উন্নতি করে।
৭। এটি এ্যাকজিমা এবং ব্রণের মতো ত্বকের অবস্থা রোধ করে।
৮। এটি ত্বককে শান্ত, পরিষ্কার ও সতেজ রাখে।
৯। এটি আটকে থাকা এবং তৈলাক্ত ত্বকের সম্ভাবনা কমায়।
পেরিলার বীজ তলা, বীজ বপন ও জমি তৈরি: জুলাই থেকে অক্টোবর মৌসুমে এই পেরিলার বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। পেরিলা অত্যন্ত ফটোসেনটিভ ফসল। সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম ৭ দিনের মধ্যে পেরিলা গাছে ফুল আসতে থাকে। কাজেই গাছ বড় হওয়া, ও নির্ধারিত মাত্রায় ফলন পেতে হলে নির্ধারিত সময়ে অবশ্যই বীজ বপন করতে হবে। প্রতি হেক্টরে এক থেকে দেড় কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজতলার প্রস্থ্য হবে এক থেকে দেড় মিটার। বীজতলায় জৈব সার ব্যবহার করে অনেক ভাল ফলন পাওয়া যেতে পারে। বীজতলার মাটি অবশ্যই ঝুরঝরে রাখতে হবে। বীজতলায় নালার ব্যবস্থা রাখতে হবে যাহাতে পানি না জমে থাকে।
১-৪ ইঞ্চি গভির করে বীজ বপন করতে হবে। অথবা বীজ ছিটিয়ে দিয়ে ঝুরঝুরে মাটি উপরে দিয়ে দিতে হবে, যাতে বীজতলা যেন একেবারে শুকিয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জমির চারপাশের নালার ব্যবস্থা রাখলে পানি দেওয়ার জন্য সুবিধা হবে। প্রত্যেকটা গাছ থেকে গাছের দুরুত্ব ৩০-৪০ সে:মি: রাখতে হবে এবং লাইনের দুরুত্ব ৩০-৪০ সে:মি: দূরে করে চারা রোপন করতে হবে। আর এভাবে পেরিলার চাষ করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, পেরিলার মতো বেশি উৎপাদনশীল ও সমৃদ্ধ নতুন নতুন ফসল উৎপাদন করা গেলে উন্নত জীবন-যাপনের পথ হবে সুগম।
ধন্যবাদান্তে
রবিউল ইসলাম
কৃষি পরামর্শ Group