কাগজি লেবু

কাগজি লেবু।

কাগজীলেবু।




 কাগজী একটি জনপ্রিয় লেবু জাতীয় ফল। এটি ( Rutaceae) পরিবারভুক্ত একটিচিরহরিৎ দ্রsতবর্ধনশীল গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। 


স্বাদ, গন্ধ, পুষ্টিমান এবং ঔষধি গুণাগুণের ভিত্তিতে লেবু জাতীয় ফলের মধ্যে কাগজি লেবু।

অন্যতম। কাগজী লেবু প্রধানত ভিটামি সি, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন সমৃদ্ধ। গরমের দিনে তৃঞ্চা নিবারণের ক্ষেত্রে কাগজী লেবুর ’সরবত’ অদ্বিতীয় পানীয়। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় এর কাগজী লেবুর চাষ হলেও পাহাড়ী


এলাকাসহ রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, যশোর ও চট্টগ্রাম জেলায় এই লেবু বেশি পরিমাণে উৎপনড়ব হয়। দেশে কাগজী লেবুরঅত্যাধিক চাহিদা এবং এই লেবু সারা বছরব্যাপী উৎপাদিত হয় বিধায় কাগজি লেবু।

 এদেশে একটি সম্ভাবনাময় ফসলহিসেবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।


বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংগৃহীত জার্মপ্লাজমের মধ্য থেকে বাছাই করে মূল্যায়েনের মাধ্যমে বারি কাগজীলেবু-১'


জাতটি উদ্ভাবন করা এবং ২০১৮ সালে জাত হিসাবে অনুমোদন করা হয়।নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত। গাছ ঝোপালো স্বভাবের, পাতা ছোট, উপবৃত্তাকার, পত্রফলকের অগ্রভাগ সূঁচালো ও গাঢ় সবুজ বর্ণের। ফুল সাদা, ছোট, উভয়লিঙ্গিক, পাঁচ (৫) পাপড়ি বিশিষ্ট্য। ফল আকারে বড় (প্রতি ফলের গড় ওজন ৮২ গ্রাম), উপবৃত্তাকার। 



ফল দেখতে উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের, সাধারণত গুচ্ছাকারে ধরে। ফল ফলের অভ্যন্তরে ১১-১২ টি খÐ বিদ্যমান, খাদ্যোপযোগী অংশ প্রায় ৫৭% এবং টিএসএস ৭.৩৫%। ভিটামিন সি : ৬৫ মিলি. গ্রাম/১০০ গ্রাম । ফলে ১৫-২২ টি পর্যন্ত বীজ বিদ্যমান। কাগজী লেবুর জাতটিতে প্রধান প্রধান রোগ ও পোকা-মাকড় এর আμমণ অত্যন্ত কম। সাইট্রাসজাতীয় ফলের অন্যতম প্রধান রোগ ক্যাংকার ও গামোসিস রোগ সহিষ্ণু ।

জলবায়ু ও মাটি: কাগজী লেবু উষ্ণ ও অবগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের ফসল। সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে কাগজী লেবুভাল জন্মে। গভীর দোআঁশ মাটি কাগজি লেবু।

 চাষের জন্য সর্বোত্তম। তবে কাগজী লেবু গাছ রোদ্রজ্জ্বল পরিবেশে ওসুনিষ্কাশ সম্পনড়ব মধ্যম অ¤য় মাটিতে ভাল হয়। এটি পাহাড়ী এলাকাসহ বাংলাদেশের সর্বত্র চাষযোগ্য। অতিরিক্ত আর্দ্রপরিবেশ কাগজী লেবুর জন্য ক্ষতিকর। সাধারণভাবে ২৫০ থেকে ৩০০ সে. তাপমাত্রায় এটির দৈহিক বৃদ্ধি সবচেয়ে ভাল হয়, ১৩০ সে., এর নিচে এবং ৪০০ সে. এর উপরে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ব্যাহত হয়।



জমি নির্বাচন ও তৈরি: রোদযুক্ত সুনিষ্কাশিত উঁচু জমি অথবা পুকুর, রাস্তা বা পাহাড়ের ঢাল লেবু চাষের জন্য উত্তম।


বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ দিয়ে আগাছা ভাল ভাবে পরিস্কার করে জমি তৈরি করতে হয়।পাহাড়ী ঢালু জমিতে ঢালের অবস্থান বুঝে আগাছা পরিস্কার করার পর নির্দিষ্ট দুরত্বে গর্ত করে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগকরতে হবে। এখানে সমতল ভূমির মতো জমি চাষ দেয়ার প্রয়োজন নেই। চারা রোপণ করার ১৫-২০ দিন পূর্বে ৩ মিটার  ৩ মিটার দূরত্বে ৮০ সে.মি. দ্ধ ৮০ সে.মি. দ্ধ ৮০ সে.মি. আকারের গর্ত করতে হবে। গর্তের উপরের মাটির সাথে ১৫-২০ কেজি গোবর অথবা জৈব সার, ৩০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি, ২০০ গ্রাম জিপসাম ও ৩০ গ্রাম বোরণ সার ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে তাতে পানি দিতে হবে। তবে মাটি অধিক হলে হেক্টর প্রতি ১ টন অথবা

গর্ত প্রতি ১.৫ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করতে হবে। উল্লিখিত রোপণ দূরত্ব হিসাবে প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১১০০ টি চারা দরকার। রোপণ পদ্ধতি ও রোপণ সময়: কাগজী লেবুর চারা সারি করে বা বর্গাকার প্রণালীতে লাগালে বাগানে আন্তঃপরিচর্যা ও ফলসংগ্রহ সহজ হয়। পাহাড়ী ঢালু জমিতে ঢালের আড়াআড়ি সারি করে চারা লাগালে মাটি ক্ষয় কম হয়। জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চারা লাগানোর উত্তম সময় তবে সেচ সুবিধা থাকেলে সারা বছর চারা লাগানো যায়।



চারা/কলম রোপণ ও পরিচর্যা: মাদা তৈরি করার ১৫-২০ দিন পর চারা বা কলম লাগাতে হয়। চারা গর্তের ঠিক মাঝখানেখাড়াভাবে লাগাতে হবে এবং চারার চারদিকের মাটি হাত দিয়ে চেপে ভালভাবে বসিয়ে দিতে হয়। তারপর চারাটি খুঁটিরসাথে বেঁধে দিতে হবে।


আগাছা দমন: গাছের পর্যাপ্ত বৃদ্ধি ও ফলনের জন্য সবসময় জমি পরিষ্কার বা আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বিশেষ করে গাছের গোড়া থেকে চারদিকে ১ মিটার পর্যন্ত জায়গা সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

পানি ও সেচ নিষ্কাশন: চারা রোপণের পর ঝরণা দ্বারা বেশ কিছু দিন পর্যন্ত পানি সেচ দিতে হবে। সর্বোচ্চ ফলনের জন্য ফুল আসা ও ফলের বিকাশের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা আবশ্যক। এ জন্য খরা মৌসুমে কাগজি লেবু।

বাগানে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমতে না পারে সেজন্য বৃষ্টি ও সেচের অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।


ডাল ছাঁটাইকরণ: গাছের গোড়ার দিকে জল-শোষক শাখা বের হলেই কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া গাছের ভিতরের দিকেযে সব ডালাপালা সুর্যালোক পায়না সেসব দুর্বল ও রোগাμান্ত শাখা প্রশাখা নিয়মিত ছাটাই করে দিতে হবে।সেপ্টে¤¦র-অক্টোবর মাস ছাঁটাই করার উপযুক্ত সময়। ছাঁটাই করার পর কর্তিত স্থানে বর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে যাতে ছত্রাক আμমণ করতে না পারে।

পাতার সুড়ঙ্গ পোকা (সাইট্রাস লিফমাইনার)

এ পোকার ক্ষুদ্র কীড়া পাতার উপত্বকের ঠিক নিচে আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গ তৈরি করে পাতায় ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং পাতার

সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এতে করে পাতা কুঁকড়ে বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে ঝরে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। এ পোকা

ক্যাংকার রোগ ছড়ায়।

দমন ব্যবস্থা: গাছে নতুন পাতা গজানোর সময় অথবা যখনই এ পোকার আμমণ দেখা যাবে তখন ইমিটাফ ২০ এসএল

প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি. লি. হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।

সাইলিড বাগ: সাইলিড বাগ সকল প্রকার লেবু জাতীয় ফসলের একটি প্রধান সমস্যা। পূর্ণবয়স্ক সাইলিড বাগ সাধারণত

৪৫০ কোণে পাতার উপর বসে পাতার রস চুষে খায় এবং পাতার উল্টো পাশে ডিম পাড়ে। সাইলিড বাগ দ্বারা প্রধানত

লেবু জাতীয় ফসলের গ্রীনিং রোগ ছড়ায়।

দমন ব্যবস্থা: এ পোকার আμমণ দেখা গেলে সাথে সাথেই ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রæপের যেকান কীটনাশক যেমন ইমিটাফ ২০

এসএল প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি. লি. হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।

লেবুর প্রজাপতি পোকা: এ পোকার কীড়া পাতা খেয়ে ফেলে। এজন্য ফলন ও গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

দমন ব্যবস্থা: ডিম ও কীড়াযুক্ত পাতা সংগ্রহ করে মাটির নিচে পুঁতে বা পুড়ে ফেলতে হবে। সুমিথিয়ন ৫০ ইসি অথবা

লিবাসিড ৫ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।


পাতা মোড়ানো পোকা: আগস্ট থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এ পোকার আμমণ বেশি দেখা যায়। বয়স্ক ও চারা উভয় প্রকার

গাছই এ পোকা দ্বারা আμান্ত হয়। পোকার কীড়াগুলি চারা ও বয়স্ক গাছের কঁচি পাতা মুড়িয়ে তার ভিতর অবস্থান করে

এবং পাতা খেয়ে ক্ষতি সাধন করে।

দমন ব্যবস্থা: এ পোকার আμমণ বেশি হলে সুমিথিয়ন ৫০ ইসি. প্রতি লিটার পানিতে ১ মি.লি মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর

১-২ বার গাছে ¯েপ্র করতে হবে। এছাড়া ফেব্রæয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে প্রধানত গাছের নতুন কুঁড়ি এবং পাতায় জাব

পোকার আμমণ দেখা যেতে পারে। এতে করে আμান্ত নতুন কুঁড়ি এবং পাতা কুঁকড়ে গিয়ে গাছের ক্ষতি হয়। এক্ষেত্রে

আμমণ বেশি হলে ইমিটাফ ২০ এসএল ০.৫ মি. লি. হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার

¯েপ্র করতে হবে।

আগা মরা (ডাইব্যাক): আন্তত গাছের পাতা ঝরে যায় ও আগা থেকে ডালপালা শুকিয়ে নিচের দিকে আসতে থাকে এবং

আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ গাছটিই মরে যায়।

প্রতিকার: পরিচর্যার মাধ্যমে গাছকে সবল ও সতেজ রাখতে হবে। আμান্ত ডালের ২.৫ সেমি সবুজ অংশসহ কেটে কর্তিত

অংশে বর্দোপেস্ট লাগাতে হবে। আμান্ত গাছে বছরে দু’একবার কপার সমৃদ্ধ ছত্রাকনাশক যেমন কুপ্রাভিট-৫০ ডবিউপি

অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে।

গামোসিস: এ রোগের  গাছের কাণ্ড, ডাল বাদামি রং এর হয়ে যায় ও ডালে লাল ফাটল দেখা দেয় ।ডাল থেকে  লাল আঠা বা কস বের হতে থাকে।

প্রতিকার: আক্রন্ত ডাল কেটে ফেলে অথবা আক্রন্ত  অংশ চেচে ফেলে আলকাতরা অথবা বর্দোপেস্ট (১০০ গ্রাম কপার সালফেট বা তুঁতে, ১০০ গ্রাম চুন ১ লিটার পানিতে গুলিয়ে তৈরি করতে হবে) লাগাতে হবে। পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থাকরতে হবে এবং সেচের পানি যাতে গাছের গোড়ায় জমে না থাকে ও গাছের গোড়ার বাকল স্পর্শ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ক্যাংকার: এ রোগের আক্রন্ত  কচি পাতা, শাখা ও ফলে ধূসর বা বাদামি রংয়ের গুটি বসন্তের মত দাগ পড়ে। লিফমাইনার পোকার দ্বারা এ রোগ সংμমিত হয় এবং ঘন ঘন বৃষ্টি হলে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।

প্রতিকার: আক্রন্ত ডগা ও শাখা ছাঁটাই করতে হবে এবং কাটা অংশে আলকাতরা অথবা বর্দোপেস্ট এর প্রলেপ দিতে হবে। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন কুপ্রাভিট-৫০ ডবিøউ পি অথবা কপারঅক্সিক্লোরাইড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ¯েপ্র করতে হবে। এছাড়া যেহেতু লিফ মাইনারপোকার দ্বারা এ রোগ ছড়ায় সেহেতু ক্ষত সৃষ্টিকারী এই লিফ মাইনার পোকা দমন করার জন্য ইমিটাফ ২০ এসএল প্রতিলিটার পানিতে ০.৫ মি. লি. হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করে করতে হবে।

ফল সংগ্রহ ও সংগ্রোহত্তর পরিচর্যা

সারা বছরই কাগজী লেবু উৎপনড়ব হয় তবে কাগজী লেবুর ফুল আসার প্রধান মৌসুম হল জানুয়ারি থেকে ফেব্রয়ারি মাস এবং তা থেকে এপ্রিল হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ফল আহরণ করা হয়। আবার অনেক সময় জুন-জুলাই মাসেও কিছু ফুল আসে

এবং তা থেকে সেপ্টেম্বর হতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। ফলের ত্বক তুলনামূলকভাবে মসৃণ ও ফলের রং গাঢ় সবুজ হতে কিছুটা হালকা হয়ে আসলে ফল সংগ্রহ করতে হবে। ফল সংগ্রহ করার পর প্রথমে বাছাই এর মাধ্যমে ভাল ও ত্রটিপূর্ণ (বাজারজাতকরণের অনুপযোগী) ফলগুলো আলাদা করা হয়। তারপর ভাল ফলগুলো গ্রেডিং এর মাধ্যমে

বিভিন্ন  সাইজ অনুপাতে ভাগ করে বাজারজাত করা হয়।







Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url