ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন ও ব্যবহার

বর্তমান ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার দিনে দিনে  বৃদ্ধি পাচ্ছে, কৃষক এবং সচেতন  সবজি উৎপাদনে যারা নিয়োজিত তার কীটনাশকের ব্যবহার কমতে এবং নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য ফেরোমন তাবিজ এর উপর ঝুকছে । অর্গানিক সবজি ও ফল উৎপাদনের জন্য ফেরোমন ফাদের ভুমিকা অপরিসীম। ছাদ কৃষিতে এর কদর বাড়ছে দিনে দিনে।


ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন ও ব্যবহার

ফেরোমন ফাঁদ 

ফেরোমনঃ-ফেরোমন একটি প্রাচীন গ্রীক শব্দ phero বহন করা এবং হরমোন, প্রাচীন গ্রীক impetus হচ্ছে নিঃসরিত হওয়া রাসায়নিক বস্তু। যা একই প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে একটি সামাজিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফেরোমন হচ্ছে রাসায়নিক পদার্থ যা স্বতন্ত্র ভাবে শরীরের বাইরে ক্ষ্ররিত হয় এবং হরমোনের মতো আচরন করে, যারা এটি গ্রহণ করে তাদের উপরও এটি স্বতন্ত্র ভাবে প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন ধরনের হরমোন যেমন এলারম ফেরোমন, ফুড ট্রেইল ফেরোমন, সেক্স ফেরোমন ইত্যাদি আছে। এছাড়া আরো অনেক ফেরোমন আছে যারা শরীরে ও স্বভাবে প্রভাব ফেলে।ফেরোমন এককোষী আদিকোষ থেকে জটিল বহুকোষী প্রকৃত কোষে ব্যাবহৃত হয়। পতংগে ফেরোমনের ব্যাবহার বেশ ভালোভাবে গবেষণা থেকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে অধিকন্তু কিছু ভাটিব্রাটা, উদ্ভিদ এবং সিলিয়াট ফেরোমন ব্যাবহার করে।

ফেরোমন একটি পোটেম্যান্টিউ শব্দ।১৯৫৯ সালে পিটার কালসন এবং মাট্রিন লুসচার গ্রীক শব্দ ফেরো(আমি বহন করি) হরমোন Stimulating কে সমন্বয় করে এই নাম রাখেন।

ফেরোমন হলো একধরনের পদার্থ যা বিভিন্ন প্রাণী এবং কীটপতঙ্গ তাদের শরীর থেকে নিগৃত ককরার মাধ্যমে ঐ প্রজাতির অন্যান্য সদস্যদের আচার -আচরনকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেরোমন ব্যাবস্থপনা প্রানীদের তুলনায় কীটপতঙ্গে অনেক সহজ। কীটপতঙ্গ ফেরোমন ব্যাবস্থপনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তথ্য আদান-প্রদান এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
ফেরোমনের প্রধান শ্রেণি সমুহঃ-
#১.Aggregation (সমাহার) ---Alarm(বিপদ সংকেত)
#২.Epideictic (নিদের্শক)Territorial(এলাকা নিধারক)
#৩.Trail Marking ( চিন্হ রেখা)-Sex(যৌন প্রজনন).
সেক্স ফেরোমন কি?
সেক্স ফেরোমন হলো একটি নিদিষ্ট গন্ধযুক্ত জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা স্ত্রী পোকার শরীর হতে নিঃসৃত হয় এবং সেই গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ পোকা স্ত্রী পোকার নিকটে চলে আসে ও তাদের যৌন মিলন হয়। বতমানে এই নিদিষ্ট গন্ধযুক্ত জৈব রাসায়নিক পদার্থ কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হচ্ছে যার দ্বারা সৃষ্ট টোপ ব্যাবহার করে পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করে বিভিন্ন ধরনের ফাঁদের সাহায্যে মেরে ফেলা হয়।ফলশ্রুতিতে পুরুষ পোকার অনুপস্থিতির কারনে স্ত্রী পোকার যৌন মিলন সম্পন্ন হয়না বিধায় তাদের বংশবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।
বায়ো- পেস্টিসাইড বা জৈব বালাইনাশক হলো বিভিন্ন বালাই দমনের এমন একটি মাধ্যম যেটি বিভিন্ন অনুজীব এবং জৈব উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।
জৈব বালাইনাশক তিনটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত--
#১. জৈব রাসায়নিক বালাইনাশক
#২.অনুজীব জৈব বালাইনাশক
#৩.পি,আই,পি(প্লান্ট ইনকপোরেটেড প্রটেক্টযান্টস)

জৈব রাসায়নিক বালাইনাশকঃ-
জৈব রাসায়নিক বালাইনাশক হলো প্রকৃতিগতভাবে উদ্ভুত উপাদান অথবা রাসায়নিক উপাদান যা গঠনগতভাবে জৈব উপাদানের সম্পুর্ন অনুরুপ। সাধারণত জৈব রাসায়নিক জৈব বালাইনাশক অবিষাক্ত পদ্ধতিতে /ভাবে কাজ করে যা বালাই সমুহের গঠন ও বদ্ধি, প্রজনন ক্ষমতা এবং বাস্তুসস্থান প্রভাবিত করে।এই ধরনের জৈব বালাইনাশকের উদ্ভিদের গঠন ও বৃদ্ধিতেও উপকারী ভুমিকা রয়েছে।জৈব রাসায়নিক জৈব বালাইনাশকে বেশ কয়েকটি শ্রেনিতে ভাগ করা যায়।

যথাঃ
১.সেমি কেমিক্যাল
ক.ফেরোমন
খ.এলিলোকেমিক্যাল
#এলোমন
#কাইরোমন
#সিনোমন
২.হরমোন
৩.ন্যাচারাল প্লান্ট রেগুলেটর এবং ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর
৪.এনজাইম
৫.বোটানিক্যাল
অনুজীব জৈব বালাইনাশকঃ
বিভিন্ন ধরনের স্পোর বা অনুজীব উতপাদনকারী অনুজীব হতে উদ্ভুত উপাদানই অনুজীব জৈব বালাইনাশক হিসাবে ব্যাবহৃত হয়। অনুজীব জৈব বালাইনাশককে পাচ ধরনের শ্রেনীতে ভাগ করা যায়।যথাঃ
১.ব্যাকটেরিয়াজাত.
২.ছত্রাকজাত.
৩.প্রোটোজোয়াজাত.
৪.ভাইরাসজাত.
৩.পি.আই.পিঃ
পি. আই.পি জেনেটিক উপাদান যা নিদিষ্ট প্রজাতির মধ্যে জেনেটিক উপাদান হিসাবে প্রবেশ করানো হয় তবে এর ব্যাবহার বিতকিত।


আজ আপনাদের সাথে ফেরমন তাবিজ বা লিওর সম্পর্কে কিছুু আলোচনা করবো।



 তাবিজ বা লিওর : কুমড়া জাতীয় ফসলের মাছি পোকার ফেরোমন টোপ।

ফসল : মিষ্টি কুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, তরমুজ, কাকরোল, শশা, করলা, পটল ইত্যাদি।

বর্ণনা : ফেরোমন এক ধরনের প্রাকৃতিক জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা কোন প্রজাতির পোকা কর্তৃক নিঃসৃত হয়। একটি প্রজাতির পুরুষ পোকাকে প্রজনন কার্যে আকৃষ্ট করে।

ফেরোমন লিওর কি? ফেরোমন যখন কোন প্লাস্টিক ভায়াল বা প্লাস্টিক ক্লিপ বা রাবার সেপ্টায় দেওয়া হয় তখন উক্ত ডিভাইজটি ফেরোমন টোপ বা লিওর।

উপকরণ : ফেরোমন টোপ, প্লস্টিক বৈয়ম, তার ডিটারজেন্ট পাউডার পানি ও বাঁশের খুঁটি।

ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন ও পদ্ধতি : প্লাস্টিক বৈয়মের ত্রিকোন অংশের মাঝ বরাবর, তার দিয়ে ফেরোমন টোপটি ঝুলিয়ে দিতে হবে। ফুল ও ফল যে উচ্চতায় থাকে ঠিক সেই উচ্চতায় ফেরোমন ফাঁদটি দুটি খুঁটির সাহায্যে বেঁধে দিতে হবে। বৈয়ামের ভিতরে ডিটারজেন্ট পাউডার মিশ্রিত পািিন দিয়ে কর্তিত অংশ ১ সেস.মি. নিচ বরাবর ভরে দিতে হবে ।

সংরক্ষণ : শুস্ক ও ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করুন।

প্রয়োগ বিধি : জমির আইলে থেকে ১৬ ফিট ভিতরের দিকে প্রতি ৩২ ফুট পর পর বর্গাকারে ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। প্রতি ২ শতাংশ জমির জন্য ১টি ফাঁদ বা প্রতি বিঘা জমিতে ১২-১৫ টি ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। হেক্টর প্রতি ৯০-১০০টি।

সাবধানতা : টোপের গায়ে যেন পানি না লাগে প্রতি ৫-৭ দিন অন্তর বৈয়ামের ডিটারজেন্ট ও পোকা মিশ্রিত পানি পরিববর্তন করে নতুন ডিটারজেন্ট মিশ্রিত দিতে হবে।

রাসায়নিক কিটনাশক ব্যবহারে পূূর্ণাঙ্গ মাছি পোকা দমন করা সম্ভব হয় না। কারণ জমিতে কিটনাশক প্রয়োগ করা হলে মাছি পোকা অন্যত্র চলে যায়। পরবর্তীতে আবার জমিতে ফিরে এসে ফসলে আক্রমণ করে। একমাত্র ফেরোমন টোপ ব্যবহারে পূর্ণাঙ্গ মাছি পোকা বংশ বিস্তার ও দমন সম্ভব।

পূূর্ণাঙ্গ এই মাছি পোকায় কুমড়া জাতীয় ফসলের জমিতে মাছি পোকার বিস্তার ঘটায় এবং সবজি ফসলের ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করে।

ধন্যবাদ সকলকে



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url