মেহেদির উপকারিতা

 মেহেদিঃ

মেহেদিঃ


মেহেদি (Lawsonia inermis), মেহেন্দী, মেন্দি। ইংরেজিতে হেনা, যা আরবি হিন্না حِنَّاء থেকে এসেছে। এটি এক ধরনের সপুষ্পক উদ্ভিদ, মেহেদি একটি লম্বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, যা সাধারণত ১.৮ থেকে ৭.৬ মিটার (৬ থেকে ২৫ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়। এটি একটি বহু শাখাযুক্ত উদ্ভিদ। কচি সময় এর কাণ্ড গুলো বেশ নমনীয় থাকলেও ধীরে ধীরে বেশ শক্ত পোক্ত এবং অভঙ্গুর হয়ে উঠে। কাণ্ডে পাতা একে অপরের বিপরীতে বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘজীবী মেহেদি উদ্ভিদে ফুল ফুটতেও দেখা যায় আবার এই ফুল থেকে ফলও উৎপন্ন হয়। 

এর পাতা প্রাচীনকাল থেকে ত্বক, চুল, নখ, পশুর চামড়া ও পশম রঙিন করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদের পাতার সাথে অন্যান্য দ্রব্য মিশিয়ে আধা-কৃত্রিম পদার্থ তৈরি করা হয়, সেটাও মেহেদি নামেই পরিচিত। মেহেদির নানা প্রকার ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে । 

এছাড়াও হাত, পা ও নখ সাজাতেও মেহেদি পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। চুল ঘন হয়, চুলের গুড়া শক্ত করে, রুক্ষতা দূর করে, চুল রেশমী ও ঝরঝরে করে, মাথা ঠান্ডা রাখে, চুলের আগা ফাটা রোধ করে, খুশকি দূর করে, চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে এবং সাদা চুল রং করে। 

ব্রোঞ্জ যুগ থেকেই দুনিয়াবাসীরা রঞ্জক হিসেবে মেহেদি ব্যবহার করে আসছে। দুনিয়ার বহু দেশে এটি উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। 

বাংলাদেশ এবং ভারতে ঈদ ও বিয়ে উপলক্ষে এর ব্যবহার অনেকটা আবশ্যিকরূপে প্রচলিত। ভারতীয় আদালতে চুলের রঙ হিসেবে মেহেদির ব্যবহারের কথা উল্লেখ আছে । 

ছত্রাক-রোধী হিসেবেও মেহেদি কার্যকর। কাপড় ও চামড়া সংরক্ষণেও এর ব্যবহার হয়। মেহেদি ফুল থেকে সুগন্ধী তৈরি হতো বহু প্রাচীনকাল থেকেই, বর্তমান যুগে এর উৎপাদন আবার শুরু হয়েছে। পোকা দমনেও মেহেদি ব্যবহৃত হয়।

 কমাতে সাহায্য করে

মেহেদি গাছের উপর কিছু গবেষণা করা হয়েছিল এবং দেখা গেছে যে এতে কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য অ্যান্টিপাইরেটিক বৈশিষ্ট্য হিসাবে কাজ করে। আয়ুর্বেদ অনুসারে, যাদের জ্বর আছে তাদের পায়ে এবং হাতে তাজা মেহেদি পাতা ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে রাখা উচিত।

 চুলের স্বাস্থ ভালো রাখতে

মেহেদির গুঁড়া পানিতে ভিজিয়ে এর পেস্ট চুলে লাগালে চুলে সঠিক পুষ্টি পাওয়া যায়, যা চুল পড়া কম করে এবং চুল নরম রাখে। দইয়ের সঙ্গে মেহেদি মিশিয়ে চুলে লাগালে আরও উপকার পাওয়া যায়। অন্যদিকে, সাদা চুল মেহেদি দিয়ে লাল রঙ করা যেতে পারে।

অনেক ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে

মেহেদিতে এমন কিছু কার্যকরী উপাদান পাওয়া যায়, যা অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। আপনার ত্বকে কোনো ক্ষত সংক্রমিত হয়ে থাকলে তাজা মেহেদি পাতা পিষে পেস্ট লাগাতে পারেন।

মাথা ব্যাথ্যা ও উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে

মেহেদি গাছের অনেক স্বাস্থ্যকর বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শরীরে কার্যকরভাবে কাজ করে। কিছু ঐতিহ্যগত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসারে, যদি মেহেদি গাছের রস বের করা হয় বা এর বীজ খাওয়া হয়, তবে এটি মাথাব্যথা এবং উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণগুলিকে অনেকাংশে কমাতে পারে ।

যাইহোক, মেহেদি থেকে প্রাপ্ত স্বাস্থ্য উপকারিতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কারণ একেকজনের শারীরিক প্রভাব একেক রকম, যার ওপর মেহেদির  প্রভাবও একেক রকম।

মেহেদির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

মেহেদি এমন অনেক উপাদান রয়েছে, যা কিছু মানুষের শরীরে বিষাক্ত প্রভাব সৃষ্টি করে এবং এই ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে শুরু করে-

  • পেট ব্যথা
  • বমি বমি ভাব
  • ডায়রিয়া
  • গ্যাস গঠন
  • কিডনি ক্ষতি
  • লাল রক্ত ​​​​কোষের ক্ষতি

অন্যদিকে, কিছু লোকের মেহেদি থেকে অ্যালার্জি হতে পারে এবং তাদের ত্বকের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং লাল ফুসকুড়ি হতে শুরু করে।

 

কিভাবে মেহেদি ব্যবহার করবেন

মেহেদি নিম্নলিখিত উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে:

  • পানির সঙ্গে মেহেদির গুঁড়া মিশিয়ে মাথায় ত্বকে লাগান।
  • এর তাজা পাতা পিষে ত্বকে পেস্ট লাগান।
  • পানিতে পাতা সিদ্ধ করে তা দিয়ে আক্রান্ত স্থান ধুয়ে ফেলুন।

যাইহোক, যদি আপনাকে মেহেদি গাছের রস খেতে হয়, তবে এটি করার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার জন্য কঠোরভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়।




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url