পোল্ট্রি'র পাশাপাশি কৃষি পণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হোন

 পোল্ট্রি'র পাশাপাশি কৃষি পণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হোন-

পোল্ট্রি'র পাশাপাশি কৃষি পণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হোন।



ইদানীং অনেকেই বলছেন পোল্ট্রি ফার্ম করে লাভবাণ হতে পারছেন না, তাদের বলবো পোল্ট্রির পাশাপাশি কৃষি পণ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করুন, কেননা- ভৌগলিক দিক থেকে পৃথিবীর দক্ষিণে আমাদের অবস্থান বলা যেতে পারে সমুদ্র তীরবর্তীতে বসবাস, প্রেক্ষিত বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনে ব্যপক বিস্তার প্রভাব ফেলছে, উৎস- নদী সমুদ্র কিংবা পাহাড়ি ঢল (উজান) মাধ্যমে, মূল বিষয় হলো বছরের অধিকাংশ সময় কৃষি জমিতে পানির প্রবাহ থাকছে যার দরুন তিন ফসলী জমি পরিনত হচ্ছে দুই ফসলী জমিতে এতে করে একদিকে যে-মন ফসল উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে তেমনি ঘটছে খাদ্য ঘার্তির কারণ, প্রেক্ষিতে প্রয়োজন হচ্ছে- খাদ্য শস্য আমদানি। 


প্রেক্ষাপটঃ

জনবহুল এদেশে দিনদিন বেকারত্বের হার বাড়ছে- তাই জনসংখ্যাকে বোঝা মনে না করে বরং নুতন নুতন কর্মপন্থা নির্ধারণ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জন-শক্তিতে পরিনত করা সম্ভব! এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি বেসরকারি- অনাবাদি জমিকে কাজে লাগানো যেতে পারে, বিশেষ করে দেশের পূর্ব ও পূর্ব-উত্তর অঞ্চল অর্থাৎ সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকা সমূহে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য পাহাড় ও টিলা- যাহা সরকারি নীয়ম মেনে লিজ নিয়ে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনায় আবাদের ব্যবস্হা গ্রহণ। 


লিজের পদ্ধতিঃ

স্হানীয় বন বিভাগ থেকে একক নামে বিশ বছর মেয়াদি (চুক্তিতে) এক একর জমি বরাদ্দের বিধান রয়েছে, প্রয়োজনে একই পরিবার একাধিক নামে বরাদ্দ নেওয়া যেতে পারে? সেক্ষেত্রে খরচ প্রতি জনের জন্য- সরকারি খাতে ফ্রী ও যাবতীয় খরচ মিলে ১০-১২ হাজার টাকা। এখানে উল্লেখ করা দরকার বন বিভাগের জমি ব্যবহারে ক্ষেএে কিছু নীয়ম অনুস্বরণ অপরিহার্য, যেমন পাহাড় কিংবা বন অঞ্চলের ক্ষতি সাধত না করে বরং সরকারি বরাদ্দে বিনামূল্যে- বীজ বা গাছের চারা রোপণ অর্থাৎ বৃক্ষের পরিধি বাড়ানো। 


সুবিধা সমূহঃ

পাহাড়ি এলাকার জমি অধিক উর্বর হওয়ায় সেখানে যেকোন ফসল উৎপাদন সম্ভব, যেমন- শাখ সব্জি, করলা, লেবু, কলা, আনাচ-কলা, আমলকী, লটকন, কামরাঙ্গা, আনারস ও কাঁচা মরিচ ইত্যাদি।


কর্মপন্থা নির্ধারণ- এলাকা ও পরিবেশগত বিষয় মাথায় রাখে অগ্রসর হওয়া উচিৎ- যেমন যেখানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি- সেখানে সেসকল পণ্য উৎপাদন, আবার কিছু এলাকায় রয়েছে বন্য প্রাণীর উপদ্রব যেমন- শিয়াল বানরের বিচলন, তাই প্রোজেক্ট শুরুর পূর্বে সমীক্ষা বা প্ল্যানিং করা একান্ত প্রয়োজন, তাতে করে  এলাকা ভিক্তিক আলাদা বা ভিন্ন প্রোজেক্ট করা যেতে পারে? যেসব এলাকায় জীব জন্তুর উপদ্রব রয়েছে- সেখানে মিষ্টি জাতীয় ফল চাষ না করে বরং সেখানে টক জাতীয় ফল যেমন লেবু করলা আনাজি কলা মান-কচু ইত্যাদি চাষ করা অধিকতর উত্তম। 


চাষ পদ্ধতিঃ

প্রথমেই উল্লেখ করা দরকার পাহাড়ি জমি উর্বরতা বেশী হওয়ায়- পানি সার ঔষধ কিংবা কীটনাশকের প্রয়োজন নেই বল্লেই চলে, এছাড়া পাহাড় মানে উপজাতিদের বসবাস উপজাতিদের জীবন-মান এখনো খানিকটা নিম্ন পর্যায়ে সাথে রয়েছে কাজের অভাব- প্রেক্ষিত কম খরচে লেবার পাওয়ার সুযোগ, একজন পুরুষ লেবার রোজ- ৪০০-৪৫০ টাকা ও মহিলা ৩০০-৩৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। 


লেবু-কলার মিশ্র চাষঃ

অর্থাৎ ১২ ফিট্ অন্তর একটি লেবুর চারা ও মাঝখানে একটি কলার ড্যেম লাগানো যেতে পারে এই পদ্ধতিতে খরচ হবে একর প্রতি এককালিন- ১,৫০,০০০= এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। আপনি চাইলে ৫-৭ একর জমি লিজ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন? 


লেবু-কলা চাষে পাঁচ একর জমির- আয় ব্যায়ের হিসাব প্রনয়ণ করা হলোঃ

আয়ের হিসাব- কলা থেকে এককালিন আনুমানিক বছরে- ২০,০০০×৫ (একর)= ১,০০,০০০= লেবু থেকে আনুমানিক- ৫,০০০×৫ (একর)= ২৫,০০০×১২ (মাস)= ৩,০০,০০০= এবং লেবুর চারা/কলম বিক্রি থেকে দ্বিতীয় বছর থেকে গড় ৬০০×২৫= ১৫,০০০×৫ (একর)= ৭৫,০০০= টাকা। সর্ব মোট আয়- ৪,৭৫,০০০/= চার লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকা। ব্যায়ের হিসাব- লেবার ও যাবতীয় (খরচ) বাদ আনুমানিক- ৭৫,০০০= নেট মুনাফা- ৪,০০,০০০= চার লক্ষ টাকা।

উল্লেখ যে- পাহাড়ি এলাকা সমূহ অনেকটা নিরাপদ অতএব কেয়ারটেকার বা আলাদা লোকবলের প্রয়োজন নেই বটে! 

তথ্য সহায়তা- প্রফেসরঃ জনাব আইয়ুব আলী, মীরসরাই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মীরসরাই পৌরসভা, চট্টগ্রাম। 


লেখকঃ

মোঃ সিরাজুল ইসলাম

ব্যবস্হাপনা পরিচালকঃ 

ব্রাদার্স পোলট্রি ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা- দীর্ঘ দুই যুগ ধরে পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত, পোল্ট্রি তথা এগ্রিকালচার সেক্টরকে কাছ থেকে দেখার সুবাদে উক্ত তথ্য চিত্র তুলে ধরা হইলো।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url