ছাদ কৃষির জন্য এক ডজন টিপস

 ছাদকৃষির জন্য এক ডজন টিপস ---------


ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে,ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল ,কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো। যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে। প্রথমেই মনে রাখতে হবে,টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মত সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।


এক। মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মিশাবেন। গাছের গোড়া শ্যাত শ্যাতে হতে দিবেন না। শ্যাতশ্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে শ্যাতশ্যাতে না। কেকোপিট মিশালে পানি কম দিলে হবে। কোকোপিট (নারিকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্বিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রত গজায়,বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।


দুই। গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো শরিষার খৈল পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। নিন্মে পাচ দিন। সাত দিন কিংবা বা পনের দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়,তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল পচা পানি দিবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।


তিন। আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারণ উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে,হালকা।

চার। যাই লাগান না কেন। ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নিবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নিন না কেন। সব পরিশ্রম বেলা শেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন। সেটার জাত ভালো হবে। সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাক নাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্বতি হলো, ছত্রাক নাশক দেয়া পানিতে কিছূটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার,মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।


পাচ। গাছ বেশী তো ফলন বেশী। এটি ভুল ধারনা। অল্প জায়গায় বেশী গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশী লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাসন এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।


ছয়। ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতা পাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশী ভালো জৈব সার হলো পাতা পচা সার,তারপর ভার্মি কম্পোস,তারপর গোবর সার। পাতা পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশী। কিন্ত ভার্মি কম্পোস(কেচো সার) সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।


সাত। নীম কীটনাশক এমন একটি জিনিস। যেটাকে ক্ষতিকারক পোকা মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্পে করে দেয়া উত্তম। অণুরুপভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইডোজেন পার অক্সাইড মিশিয়ে স্পে করা ভালো।


xxxxxxxxx

আট। ডাটা,পুইশাক, লালশাক,ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দিবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরনা দিবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাক নাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রত বাড়বে। শষা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিতে ভালো হবে। শসা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাক নাশক স্পে করতে হয়। খুব রোদ,গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা,খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।


নয়। ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্পে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাক নাশক রাখা ভালো। যেমন ম্যানসার,মেটারিল।  ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন।  এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোন অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে নিন্মে একবার স্পে করে দিবেন। 


অতিরিক্ত গরম,বৃষ্টি,খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত,আবহাওয়া দ্রত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাত পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদন্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।



দশ। ছাদ বাগানে গাছ মারা যাবার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া।  যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে।  কোন গাছের কি চাহিদা,রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।


এগার। গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র করলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশী রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন।


 বেগুন,ঢেড়স,লাল শাক,পুইশাক,ধনেপাতা,ডাটা শাক এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

বার। রসুন আর লবঙ্গ বেটে সে পানি গাছে স্পে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেধে দিন। পোকা কম আসবে। পাতা কুকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা  এবোম কীটনাশক দিন। কুকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের  (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। 


সব কিছু করছেন। কাজ হচ্ছে না। গাছের জায়গা বদল করেন। উঠিয়ে অনত্র লাগান।


শফিক,মিরপুর ১২,ঢাকা।


লেখক: দীর্ঘদিন যাবৎ ছাদ কৃষির সংঙ্গে জড়িত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url