ব্রয়লার মুরগী চাষে করোনীয়

 ব্রয়লার মুরগি এমন একটা আবিষ্কার,  আসলেই যার পরিপূরক, সমতুল্য বা বিকল্প কোন জাত আবিষ্কার হয় নাই। এর প্রসারের সাথে সাথেই গরিবের পক্ষে যখন তখন মাংস কেনা সম্ভব হচ্ছে, যদিও অনেকেই ব্রয়লার মাংস পছন্দ করে না, তবে এটা সম্ভব হয়েছে শুধু ব্য়লারের কল্যাণেই। ব্রয়লার যথেষ্ট সুস্বাদুও, কিন্তুু আমাদের অনেকেই নাক ছিটকায়। এর কারণ, এর বেশি সহজলভ্যতা।

বড়লোকের মাঝে একটা সাধারণ  tendency বা ঝোক আছে, তাহল যদিও কোন পণ্য গুণে মানে একই হয়,  কিন্তুু যদি জিনিসটার দাম অন্য জিনিসের তুলনায় কম হয়, তাহলে তারা কিনবে না। তাদের আসলে গুণের দরকার নেই, তাদের দরকার পণ্যটির দাম।  যে পণ্যের দাম বেশি এবং ব্র্যাণ্ড আছে তারা সেটাই কিনবে। আর এজন্য কোম্পানিগুলো কোন জিনিসের দাম কম নির্ধারণ করতে চায় না। ওদের কারণেই সোয়াবিন আর লবণের দাম বেশি। যেমন কোন কোম্পানি যদি অন্য কোম্পানির চেয়ে লবণ বা তেলের দাম কেজিতে ১০ টাকা নির্ধারণ করে,  তারা বেশি দামেরটাই কিনবে। কমদামীটা কিনবে না। তদ্রুপ, খামারিদের মাঝেও একটা কমন প্রবণতা আছে,  তাহল যে ফিডের দাম ২০০০ এর নিচে,  তারা মনে করে এই ফিড ভাল না। এটা খাওয়ালে মুরগি বাড়বে না। কোম্পানি গুলো তাদেরকে এমন এক টোটকা দিয়ে দিয়েছে যে তারা নারিশ আর এসিআই এর ফিডই কিনবে। তেমনি যখন বাচ্চা কিনবে,  তারা খুজবে কাজী, নারিশ অমুক তমুক। কিন্তুু একটা জিনিস বুঝে আসে না, নারিশ কাজী যে মেশিনে বাচ্চা ফোটাই, একই মেশিন দিয়ে অন্যান্য কোম্পানিও বাচ্চা ফোটায়।  তাহলে সমস্যাটা কোথায়?? আবার কোন বৃহৎ কোম্পানি যখন খাবার বানায়,  সকল উপাদান এবং রিমিক্স বা মাল্টিভিটামিনগুলো সমানভাবেই দেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ ঔ খাবারটা আপনি আর আমি বানাচ্ছি না। বানাচ্ছে কো ভেটেনারি অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শেই। আর খাদ্য এবং ব্রয়লার বাচ্চার দাম খামারিদের এই প্রবণতার কারণেই বাড়ছে। কারন কোন নতুন কোম্পানি যদি খাদ্যের দাম ২০০০ এর নিচে নির্ধারণ করে আপনারাই বলবেন খাদ্যের মান ভালো না।

এই ব্যাপারটা সবকিছুর ক্ষেত্রেই।  যে সয়াবিন তেল এখনও হয়ত ৮০ টাকায় পাওয়া যায়, সেখানে আপনি আমি মানের দোহাই দিয়ে ১৩০-৪০ টাকারটা কিনছি। একই তেল যখন খোলা থাকে তখন দাম ৮০ টাকা, গায়ে যখন সে ব্র্যান্ডের পোশাক পড়ে তার দাম বেড়ে হয়ে যায় ১২০-৩০ টাকা।

সবসময় এত স্বাস্থ্য সচেতন হলে চলে না। একটু কম দামেরটা খান। যতই চাপাচাপি আর লাফালাফি করি ৬০-৭০ এর ওপর তো এ যুগে কেউ টিকবে না। তো এত ভাল খেয়ে কি হবে?? এসব করে তো আমরা তীর, ACI, প্রাণ এগুলোর মান বাড়িয়ে দিয়েছি। নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিন। ব্র্যান্ড ছাড়ুন। ২০ টাকা কেজি লবণ, আর খোলা সোয়াবিন খান। বসুন্ধরায় মার্কেট না করে,  লোকাল বাজারে করেন।


 অনেকদিন ধরেই আমার একটা কৌতুহল,  অন্য বাচ্চা যেমন ফাওমি,  সোনালির দাম যেখানে ২০-৩০ এর মধ্যে থাকে, সেখানে ব্রয়লার এর দাম ৫০-৬০ টাকা কি করে হয়?? মানলাম ব্য়লার মুরগি ডিম কম দেয়,  খাবার বেশি খায়, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক বেশি। তাই বলে একটা বাচ্চার দাম ৫০-৬০ টাকা কিভাবে হয়, কেউ ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করবেন। 

আমাদের খামারিদের অতিলোভের কারণেই, রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন থেকেই মনে হয় বাচ্চার দাম এত বেশি। না জেনে না বুঝে না শিখে ঋণ করে কেউ ব্রয়লারের নাম মুখেও আনবেন না। রাতারাতি বড়লোক হওয়া যায় না। ২০০০, ৩০০০, ৫০০০ পালার দরকার নাই।  নিজের টাকায় ৫০০-১০০০  দিয়ে শুরু করেন। যত লাভ তত ক্ষতি। তবে বেশি বাচ্চা পালনের সুবিধাও আছে,  তবে সবার জন্য না। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। আপাতত ১০০০ এর ওপর কেউ বাচ্চা পালবেন না। দেখবেন বাচ্চার দাম কমবে। চাহিদা কম থাকলে জিনিসের দামও কমে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url