জৈব বা অরগানিক শাকসবজি।

জৈব বা অরগানিক শাকসবজি।

জৈব বা অরগানিক শাকসবজি।

শাকসবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল তবে আমরা সাধারণত আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যে শাকসব্জি খাই তা কতটা নিরাপদ । ধনী বা দরিদ্র  বিশ্বের প্রায় সব দেশই এখন ইচ্ছামত বাণিজ্যিক শাকসব্জি উত্পাদনে উচ্চ স্তরের ক্ষতিকারক রাসায়নিক কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করছে।  

শাকসবজি সংগ্রহের পরে বিভিন্ন জীবাণুর উপস্থিতি এবং  সবজি পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত দূষিত জল ইত্যাদি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে। উত্পাদনের পর্যায়ে, ফসল তোলার  পরে, বিপণনের পর্যায়ে এমনকি শাকসবজি রান্না ও খাওয়ার সময়ও বিভিন্ন কারণে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে।

তাই এখন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য শাকসবজি খাওয়া কতটা ভাল তা নিয়ে ভাবতে হবে। এই ঝুঁকিগুলি বিবেচনা করে অনেকে শাকসবজি খাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন। এবং যাদের কাছে অর্থ রয়েছে তাদের অনেকেই এখন নিরাপদ অরগানিক শাকসব্জির সন্ধান করছেন। এক কথায়, বেশিরভাগ স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এখন জৈবিকভাবে বা অরগানিক শাকসব্জিতে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে মনে রাখবেন যে নিরাপদ শাকসব্জির অর্থ কেবল জৈব বা অরগানিক জাতীয় শাকসব্জী নয়।

 অরগানিক সবজিগুলি ক্ষেত থেকে বাছাইয়ের পরে বাজারে  আসা পর্যন্ত অনেক উপায়ে অনিরাপদ হতে পারে। এখন প্রশ্ন, নিরাপদ শাকসব্জি কোথায় পাবেন, এর নিশ্চয়তা কে দেবে? এবং কৃষকরা এটি উত্পাদন করলেও ন্যায্য দাম কে দেবে? এই সমস্ত চ্যালেঞ্জের মধ্যে এখন আমাদের জৈবিকভাবে নিরাপদ শাকসবজি উত্পাদন করতে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে। নিরাপদে সবজি উৎপাদনে জোর দিয়ে সরকার বেশ কয়েকটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে।

বর্তমান প্রায় সব মানুষ নিরাপদ শাকসব্জী বা অরগানিক সবজি খুঁজছেন। অরগানিক সবজির বিপণন শুরু হয়েছে বিভিন্ন সুপার শপে ।তবে জৈব বা অরগানিক সবজির দামও অনেক টা তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে আমাদের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে প্রথমে খাবারের প্রয়োজন হয় এবং তারপরে অরগানিক বিষয়টি ভাবা হয়। জৈব বা অরগানিক সবজি চাষ করলে কম ফলন দেয়।

 এজন্য বাণিজ্যিকভাবে জৈবিক পদ্ধতিতে শাকসব্জী উপাদন বা চাষ আমাদের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করবে না। সেক্ষেত্রে জৈব বা অরগানিক সবজির দাম যদি কিছুটা বেশি হয় তবে অনেক কৃষক এটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। সংক্ষিপ্ত পরিসরে, বিশেষত বাড়িতে, আমাদের প্রত্যেকে কমপক্ষে জৈবিকভাবে বা অরগানিক শাকসব্জী জন্মাতে পারে এবং সেগুলি নিজেরাই খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রফতানির সুযোগ তৈরি করে জৈবিকভাবে শাকসব্জী উত্পাদন করাও সম্ভব।

জৈব সবজি চাষের ধারণা:- জৈব বা অরগানিক সবজি উত্পাদন হলে ফসলে সবুজ সার, কম্পোস্ট, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং যান্ত্রিক চাষকে বাদ দিয়ে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, হরমোন ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় , এই পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনা অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং কোন রাসায়নিক সার বা কীপনাশক  চাষে ব্যবহৃত হয় না। এটি ফসলের দূষণের সম্ভাবনা দূর করে এবং নিরাপদ সবজি উত্পাদন নিশ্চিত করে।

জৈব বা অরগানিক চাষের ইতিহাস: জৈব চাষের ধারণার মূলটি আদিম। এই পদ্ধতিটি প্রাচীন কাল থেকেই চাষ করা হচ্ছে। গত শতাব্দীতে কৃষিতে রাসায়নিকের ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছিল। রাসায়নিক সারের ব্যবহার ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছিল এবং ফলন বাড়েছে। ক্ষুধার্ত বিশ্বে সেই সময় খাদ্য উত্পাদন বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। হয়ত সেটাই কারন ছিলো । তবে ধীরে ধীরে লোকেরা বুঝতে পারছে যে রাসায়নিক পণ্যগুলির ব্যবহার কেবল পেটের ক্ষুধা মেটায় তা নয়, মানুষের অসুস্থতাও বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং, ১৯৯০ সাল থেকে জৈব বা অরগানিক পণ্যগুলির বাজার দ্রুত বাড়ছে। জৈব বা অরগানিক উৎপাদনের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি জৈব চাষের আওতাধীন অঞ্চলও বাড়ছে। 

জৈব বা অরগানিক চাষের আন্দোলন ১৯৩০ সালে শুরু হয়েছিল। ১৯৩৯ সালে এক জন লর্ড সর্বপ্রথম তাঁর বইতে (১৯৪০) জৈব চাষ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। রাসায়নিক সারের উপর কৃষকদের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতার জবাবে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। প্রথম সুপারফসফেট সারগুলি ১৮ তম শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিল এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যামোনিয়া থেকে প্রাপ্ত সার তৈরি করা হয়েছিল। রাসায়নিক সারগুলি দ্রুত পরিমাণে জনপ্রিয়তা লাভ করছে কারণ এগুলি স্বল্প পরিমাণে ব্যবহৃত হয়, দ্রুত কাজ করে অর্থাত্ খুব শক্তিশালী, দামে সস্তা এবং পরিবহণে সুবিধাজনক। একইভাবে, ১৯৪০ এর দশকের গোড়ার দিকে, রাসায়নিক কীটনাশকের বিকাশ এমন পর্যায়ে হয়েছিল যে রাসায়নিক কীটনাশকের যুগটি সেই দশকের শেষের দিকে শুরু হয়েছিল। স্যার অ্যালবার্ট হাওয়ার্ডকে জৈব বা অরগানিক চাষের জনক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। 


শুরু থেকে এখন অবধি, বিশ্বের মোট কৃষিক্ষেত্রের খুব অল্প শতাংশই জৈব বা অরগানিক পদ্ধিতি   ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করছে।

জৈব বা অরগানিক নিরাপদ সবজি উৎপাদনে প্রযুক্তি:- জৈব বা অরগানিক চাষের মূল বিবেচনা হ'ল কম খরচে কীভাবে জৈবিক বা অরগানিক ভাবে নিরাপদ সবজি উৎপাদন বাড়ানো যায়। কারণ জৈব বা অরগানিক পণ্যগুলিরও বাজারে প্রতিযোগিতা করতে হয়। আবার কম উপকরণ ব্যবহারের কারণে উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হয়। অতএব, জৈব বা অরগানিক খামার পরিচালনায় যাওয়ার আগে, আপনাকে খামারের আয় এবং ব্যয় গণনা করতে হবে এবং বাজারে বিক্রয়ের সুযোগ কোথায় রয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া ক্রেতাদের কেন জৈব বা অরগানিক সবজি কেনা উচিত সে সম্পর্কে একটি প্রচারণা চালানো উচিত। মানুষ যতো  স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতন হবে তত বেশি জৈব বা অরগানিক সবজি কেনার আগ্রহ বাড়বে । জৈব বা অরগানিক সবজি চাষে যে কৌশলগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে সেগুলি হ'ল:-

কিছু শাকসবজি রয়েছে যা কম উপাদান ব্যবহার করে ভাল ফলাফল দেয় এবং কীটপতঙ্গ ও রোগের জন্য কম সংবেদনশীল  বিশেষত স্থানীয় বা আদিবাসী জাতগুলির এরূপ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই জাতীয় জাতগুলি জৈবিকভাবে অরগানিক চাষ করা যায়।

নেট দিয়ে চারপাশ ঘিরে এর ভিতরে কীটনাশক ছাড়াই পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করে সবজি চাষ কর্ যায়। পরিমাণমতো  জৈব সার সবুজ সার ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।

বায়োফাটিলাইজার এবং কীটনাশক (ট্রাইকোডার্ম) ব্যবহার করা উচিত। বিভিন্ন গাছপালা থেকে তৈরি কীটনাশক ব্যবহার করে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে উত্সাহিত করতে হবে। জৈব চাষের জন্য কিছু জৈব কীটনাশক অনুমোদিত হয়েছে। সাধারণভাবে, জৈব কীটনাশক অজৈব কীটনাশকের তুলনায় কম বিষাক্ত এবং পরিবেশ বান্ধব যেমন ফেরোমন ফাদ । কম বিষাক্ত জৈব কীটনাশকগুলির মধ্যে নিম পাতা, সাবান, রসুন, নিমের তেল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত । চাষে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। শস্যগুলি বৈচিত্র্যময় করা দরকার। সবজি বপন বা রোপণের সময়টি আগেই গণনা করা উচিত। সেচটি যৌক্তিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। প্রয়োজনে খরার সময় মালচিং করা উচিত। পরিপক্কতার সূচক অনুসারে উপযুক্ত সময়ে শাকসব্জী তোলা উচিত। শাকসবজি তুলে বাছাইয়ের পরে, জীবাণুমুক্ত জল দিয়ে ধুয়ে বা পরিষ্কার করে বাজারজাত করা উচিত। শাকসবজি বাজারজাত করার সমায় নিরাপদ জীবাণুমুক্ত ভাবে  প্যাক করা উচিত। ক্ষেত থেকে শাকসবজি সংগ্রহের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিপণন করা উচিত। শাকসব্জী খাওয়ার আগে জীবাণুমুক্ত পরিষ্কার পানিতে ভালভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত।

সৌজন্যে---------------------

 নিচের পোষ্ট গুলি পড়তে ক্লিক করুন             

বিভিন্ন ঔষধি গাছ।

ভেষজ চা কি।

থানকুনি পাতার উপকারিতা।

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী গাছের অবিশ্বাস্য যত গুণ!

ড্রাগন ফলের বিস্ময়কর গুণাগুণ।

গাজরে পুষ্টি ও গুণাগুণ।

বিটা রুট সবজির উপকার।

সজনের ডাঁটাতে ও শাকে অবিশ্বাস্য সুবিধা

ঢেঁড়সের বিস্ময়কর উপকারী ও ওষুধি গুণাগুণ।

ফুলকপি খাওয়ার সুবিধা বা উপকার।

কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা|






Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url