ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি।

 

ঢেঁড়স চাষ

ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি

ঢেঁড়স  বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন সবজির একটি। সবজি হিসাবে এটি সবার প্রিয়। এতে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং খনিজ রয়েছে। আলুর বীজে উচ্চমানের তেল এবং মাংস থাকে।  ঢেঁড়স ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের অসুস্থতায় খুব উপকারী। আবার ঢেঁড়স গাছের আঁশ থেকে দড়িও তৈরি করা যায়। তবে জনপ্রিয় এই সবজিটি বেশ কয়েকটি ক্ষতিকারক রোগে আক্রান্ত হয়। যদি এই রোগগুলি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবে ঢেঁড়স  ফলন অনেক বাড়বে। নিম্নলিখিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ এবং তাদের প্রতিকার রয়েছে।


1. রোগের নাম:  ঢলে পড়া 

রোগের কারণগুলি: ফিজারিয়াম অক্সিসপোরাম  f.sp. নামক ছত্রাকের দ্বারা এই রোগ হয় ।


রোগের বিস্তার: ছত্রাক প্রধানত মাটি বহন করে এবং অন্যান্য ফসলের আক্রমণ করে। মাটিতে জৈব সার বেশি থাকলে এবং জমিতে ধানের খড় থাকলে জীবাণুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। রোগের তীব্রতা সাধারণত যখন মাটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় (২৮-৩0 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) এবং সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্দ্রতা থাকে।  আক্রান্ত ফসলের জমি থেকে সেচের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ফসলের জমিতে ছড়িয়ে পড়ে।


রোগের লক্ষণ:ঢেঁড়স গাছের বৃদ্ধির যে কোনও পর্যায়ে এই রোগ দেখা দিতে পারে। তবে চারাগাছায় এটি বেশি দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে গাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং পাতা হলুদ হয়ে যায়। যখন রোগের সূত্রপাত বেশি হয় তখন পাতাগুলি ক্ষয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত গাছটি মারা যায়।


যদি সংক্রামিত গাছের শিকড়গুলি উল্লম্বভাবে কাটা হয় তবে এর পরিবহন টিস্যুগুলিতে কালো দাগ দেখা যায়।


প্রতিকার: প্রথম দিকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঢেঁড়স বীজ বর্ষার আগে বপন করা উচিত, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে। রোগ প্রতিরোধী জাত (বারিঢেঁড়স  ১-এর মতো) চাষ করতে হবে। চুন জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।


জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে পটাশ সার প্রয়োগ করলে রোগ হ্রাস পায়। রুট অন্ত্রে কীটপতঙ্গগুলি দমন করা উচিত কারণ এটি ছত্রাকের অনুপ্রবেশে সহায়তা করে। কার্বেনডাজিম গোষ্ঠীর ছত্রাকনাশক  প্রতি কেজি বীজ২.৫ গ্রাম হারে মিশ্রিত করা উচিত। কার্বেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন অটোস্টান) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশ্রিত করতে হবে এবং প্রতি ৮-১০ দিন পর গাছের গোড়ায় ২-৩ বার স্প্রে করা উচিত।


২) রোগের নাম:  গোড়া ও কাণ্ড পচা

রোগের কারণ: ম্যাক্রোফোমিনা ফেসিওলিনা নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়।

রোগের বিস্তার: এই রোগটি বীজ, মাটি এবং বায়ু দ্বারা সংক্রামিত হয়। গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়া, অতিরিক্ত নাইট্রোজেন এবং কম পটাশ সার ব্যবহার এই রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে তোলে। যদিও মাটির তাপমাত্রা (৪0 ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি, রোগটি বেশি দেখা যায়।


লক্ষণ: এই রোগটি সাধারণত মে মাসে দেখা যায় এবং জুন-জুলাই মাসে মারাত্মক আকার ধারণ করে।


মাটি সংলগ্ন গাছের শিকড় নরম ও পচে যায়। পিকনিডিয়া আক্রান্ত শিকড় এবং শিকড়ের কালো বিন্দু হিসাবে দেখা যেতে পারে। রোগের বিকাশের অনুকূল পরিস্থিতিতে পুরো উদ্ভিদটি ২-৩ দিনের মধ্যে শুকিয়ে যায়।


প্রতিকার: স্বাস্থ্যকর বীজ বপন করতে হবে। প্রথম  পর্যায়ে অবলম্বন করতে হয়।  শুরুতে আক্রন্ত মাঠের গাছগুলি উপড়ে ফেলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।  ঢেঁড়স বীজ বর্ষার আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে বপন করতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাত বারি  ঢেঁড়স ১-এর মতো চাষ করতে হবে।


কার্বেন্ডাজিম গোষ্ঠীর ছত্রাকনাশক (উদাঃ অটোস্টিন) বা কারবক্সিন + থিরাম গ্রুপ ছত্রাকনাশক (উদাঃ প্রোভাক্স ২০০ ডাব্লুপি) প্রতি কেজি বীজ ২.৫ গ্রাম হারে মিশ্রিত করা উচিত।


মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক (উদাহরণস্বরূপ ডাইথেন এম ৪৫) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে বা কপার অক্সি ক্লোরাইড গ্রুপের ছত্রাকনাশক  প্রতি লিটার পানিতে ৫গ্রাম হারে ৭ বারে 2-3 দিন স্প্রে করা উচিত দিন


৩. রোগের নাম: হলুদ শিরা মোজাইক 


রোগের কারণ: ভাইরাসজনিত কারণে এই রোগ হয়।


রোগের বিস্তার: সংক্রামিত  ঢেঁড়স গাছের সংগৃহীত বীজ বপনের মাধ্যমে এই রোগ হয়। এই রোগটি হোয়াইটফ্লাইস দ্বারা আর্দ্র আবহাওয়ায় এই রোগের  সংক্রমণ করে। পরাগায়ন এবং কৃষি যন্ত্রপাতি মাধ্যমে এই রোগটি স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদে ছড়িয়ে পড়ে।


লক্ষণ: গাছের যে কোনও বয়সে এই রোগ দেখা দিতে পারে। সংক্রামিত পাতার শিরাগুলি স্বচ্ছ হয়ে যায়। যখন রোগটি গুরুতর হয়, তখন পুরো পাতা হলুদ হয়ে যায়, পাতা ছোট হয়ে যায় এবং গাছ আরও খাটো হয়। রোগের ফলস্বরূপ, গাছের ফুল কম হয়, ফলগুলি আকারে ছোট, শক্ত এবং হলুদ বর্ণের হয়।


প্রতিকার: প্রতিরোধী  জাতের চাষ করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছগুলি দেখা মাত্র তাড়াতাড়ি বাছাই করে পোড়ানো উচিত।পরের বছর বপনের জন্য সংক্রামিত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা যায় না।


হোয়াইটফ্লাইস নিয়ন্ত্রণ করতে, ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপ কীটনাশক (যেমন অ্যাডমায়ার বা এমিটাফ) প্রতি লিটার পানিতে 0.৫ মিলি মিশ্রিত করা উচিত এবং ৭ দিনের মধ্যে২-৩ বার স্প্রে করা উচিত।



৪. রোগের নাম: পাতার দাগ রোগ 

রোগের কারণগুলি: আল্টরনারিয়া এবং সারকোসপোরা  প্রজাতির ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়।রোগের বিস্তার: রোগের জীবাণু গাছের পরিত্যক্ত অংশ থেকে বায়ু, জল ইত্যাদির মাধ্যমে এক জমি থেকে অন্য জলে বা এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়ে।


রোগের লক্ষণ: যে কোনও বয়সের গাছ এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।ছত্রাক আল্টারনারিয়া পাতায় বিভিন্ন আকারের গোল, বাদামী এবং গোলাকার দাগ তৈরি করে। দুর্বল গাছে এই রোগ বেশি দেখা যায়। ছত্রাক সারকোসপোরা পাতায় কোনও দাগ সৃষ্টি করে না তবে পাতার নীচে একটি ঘন কালো গুঁড়ো লেপ দেয়। যখন এই রোগের প্রকোপ বেশি থাকে, তখন পাতাগুলি মুচড়িয়ে যায় এবং পরে পড়ে যায় ।


প্রতিকার: ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পোড়াতে হবে।

রোগ প্রতিরোধী জাতগুলি ব্যবহার করতে হবে, যেমন বারি ঢেঁড়স-১  । মাঝারি সার ও সময়মতো সেচ প্রয়োগ করতে হবে। কার্বেনডাজিম গোষ্ঠীর ছত্রাকনাশক (উদাঃ অটোস্টিন) বা কারবক্সিন + থিরাম গ্রুপ ছত্রাকনাশক (উদাঃ প্রোভাক্স ২০০ ডাব্লুপি) প্রতি কেজি বীজ ২.৫গ্রাম হারে মিশ্রিত করা উচিত। অলটারনারিয়া পাতার ছত্রাকনাশক (রোভরাল ৫০ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ৩ বার স্প্রে করুন। কার্বনডাজিম গ্রুপ ছত্রাকনাশক (উদাঃ অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম একটানা ২-৩ বার ৮-১০ দিন  স্প্রে করা দরকার ।


৫. রোগের নাম: শিকড় গিট


রোগের কারণগুলি: মেলোডোগাইন (মেলোডোগাইন এসপিপি।) প্রজাতির কৃমি রোগটিতে আক্রমণ করে।


রোগের বিস্তার: মেলোয়ডোগাইন প্রজাতির কৃমি মাটিতে থাকে। এই রোগটি সংক্রামিত মাটি, শিকড়, বৃষ্টি এবং সেচের জল এবং কৃষি যন্ত্রপাতি দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত২৮-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  একই জমিতে বছরের পর বছর ঢেঁড়স চাষ করা হয় তখন এই রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।


রোগের লক্ষণগুলি: চারাগুলিতে কৃমি দ্বারা আক্রমণ করা হলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং গাছটি সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়।


পাতা হলদে সবুজ বা হলুদ হয়ে যায় এবং পাতা ঝরে পড়ে। গাছে ফুল এবং ফলের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পায়।

সংক্রামিত গাছগুলির শিকড় এবং মূল কেশগুলিতে অসংখ্য গিট দেখা যায়।

এই গিটগুলি সাদা রঙের হয়।

প্রতিকার: ফসল তোলার পরে অবশিষ্টাংশ পুড়ে ফেলতে হবে।


শুকনো মরসুমে জমিটি পতিত অবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে এবং ২/৩ বার চাষ করে মাটি ভালভাবে শুকানো উচিত। যদি জমি প্লাবিত হয় তবে এই রোগের কৃমি মারা যায়, তাই যদি সুযোগ থাকে তবে এটি বছরে একবার প্লাবিত হওয়া উচিত।


প্রতি হেক্টরে পাঁচ টন অর্ধ পচা মুরগির সার জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগের ২-৩ সপ্তাহ পরে জমিতে বীজ বপন করতে হবে।



লক্ষণগুলির ক্ষেত্রে ৪0 কেজি কার্বোফুরান গ্রুপ কীটনাশক (যেমন ফুরাডান ৫ জি) বা ইসাজোফস গ্রুপ কীটনাশক (উদাহরণস্বরূপ মিরাল ৩ জি) মাটিতে ছিটিয়ে ভাল মিশ্রিত করতে হবে এবং হালকা সেচ দিতে হবে।

আমার বাসার ছাদে অনেক ধরনের সবজি চাষ করি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি করা হয় ঢেঁড়স। আমি মনে করি এর চাষ পদ্ধতি বেশ সহজ । এর চারাগুলো একবার ভালো ভাবে হলে অনেক মাস পর্যন্ত  ফসল পাওয়া যায়। এটা ছাদের বেড, ছোট টব বা ছোট ড্রাম বা  মাঝারে  বোতল কেটে তাতে ভালভাবেই চাষ করা যায়। পাঠকের চাহিদার ভিত্তিতে আজকের এই ঢেঁড়স চাষ নিয়েই আলোচনা করছি।তাহলে পড়ুন নিচের অংশ।

ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি



ঢেঁড়স আমাদের দেশে বৃহৎ পরিসরে চাষ করা হয় কেননা এটি একটি জনপ্রিয় সবজি। ঢেঁড়স মূলত শীতকালীন সবজী হলেও বর্তমানে এটি সারা বছরই চাষ করা যায়। ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাসে ভিটামিন এ, বি ও সি এবং এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমানে আয়োজিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে। ঢেঁড়শ নিয়মিত খেলে গলাফোলা রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে না, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে, এছাড়াও এটা হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।


জাত:

বারি ঢেঁড়স-১ : এটি উচ্চ ফলনশীল জাত সারাবছর চাষ করা যায়। বীজ বপনের ৪৫ দিনের মধ্যে ফুল ফুটতে শুরু করে। ফুল ফুটার ৫-৬ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে ১ দিন পর পর ফল সংগ্রহ করতে হয়। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ২৫-৩০ টি। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১৪-১৬ টন।
বারি ঢেঁড়স-২ : এটিও উচ্চ ফলনশীল জাত তবে আগাম জাত। বীজ বপনের ৪০-৪২ দিনের মধ্যে ফুল আসে। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৩২-৩৮ টি। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১৭-২১ টন। এছাড়াও হোয়াইট ভেলভেট, কাবুলি ডোয়ার্ফ, ডোয়ার্ফ প্রলিফিক, ঝুম আর্লি, শ্রাবনী, পুশা মলমলি, পুশা সাওয়ানী, পেন্টা গ্রীন, ওকে-০২৮৫, শাউনি,পারবনি কানি, জাপানী প্যাসিফিক গ্রীন ইত্যাদি ঢেঁড়সের জাতের চাষ হচ্ছে।

.

মাটি প্রস্তুতকরণ:-

--

শহরে থেকে আপনি চাইলেই ভাল মাটি সংগ্রহ করতে পারছেন না। তাই, যে মাটিই পান সেটাতেই চাষ শুরু করুন। মাটিতে গোবর, কম্পোস্ট, সরিষার খৈল, পটাশ ও টিএসপি সার ভালভাবে মিশিয়ে নিন। ছোট টবে চাষ করলে জৈব প্রয়োগ করবেন।

.

বীজ বপনের সময়:

খরিপ-১: মধ্য জানুয়ারী থেকে মধ্য মার্চ
খরিপ-২: মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে।
রবি : মধ্য আগষ্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর
সারা বছরই ঢেঁড়স চাষ করা যায়। তবে ফাল্গুন ,চৈত্র ও আশ্বিন-কার্তিক মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
বীজের পরিমাণ
শতক প্রতি ২০ গ্রাম এবং হেক্টর প্রতি ৪- ৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।

বীজ বপন:


বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হয়। সারি করে বীজ বপণ করা হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪৫ সে.মি. এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩০ সে.মি. রাখতে হয়। অর্থাৎ লাইনে ৩০ সেমি. দূরে দূরে ২ টি করে বীজ বুনতে হয়। বীজ মাটির ২-৩ সেমি গভীরে বুনতে হয়। জাত অনুযায়ী চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দুরত্ব ১৫ সেমি. কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে। শীতকালে গাছ ছোট হয় বলে দূরত্ব কমানো যেতে পারে। চারা গজানোর ৭ দিন পর প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ সবল চারা রেখে বাকি চারা গর্ত থেকে তুলে ফেলতে হবে।

.

সার প্রয়োগ:

ভালো ফলন পেতে হলে নীচের সারণী অনুযায় সার প্রয়োগ করতে হবে। ( হেক্টর প্রতি )
সার মোট পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) শেষ চাষের
সময় দেয় পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয়
প্রথম কিস্তি দ্বিতীয় কিস্তি তৃতীয় কিস্তি
গোবর ১৪ টন সব – – –
ইউরিয়া ১৫০ কেজি ৭৫ কেজি ২৫ কেজি
টিএসপি ১০০ কেজি সব – – –
এমওপি ১৫০ কেজি ৭৫ কেজি ২৫ কেজি
জিপসাম ৭০ কেজি সব – – –
বোরণ ২ কেজি সব – – –
মলিবডেনাম ০.৬ কেজি সব – – –


অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা

গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধির সময় নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং মাটির উপরিভাগ মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে। পানি সেচ দেওয়ার পর জমিতে ‘জো’ আসলে কোঁদাল দিয়ে মাটির উপরের চটা ভেঙ্গে দিতে হয়। এত মাটির ভিতরে আলো-বাতাস ঢুকতে পারে এবং মাটি অনেক দিন রস ধরে রাখতে পারে। আগাম মৌসুমে ঢেঁড়স চাষ করলে পানি সেচ দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে। মাটির প্রকারভেদ অনুসারে ১০-১২ দিন পর পর সেচ দেওয়া দরকের। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের জন্য ২৫-৩০ সেমি. উঁচু করে বেড তৈরি করে নিতে হবে।

পোকা- মাকড় ও রোগ-বালাই দমন

পোকা- মাকড়:
পাতা মোড়ানো পোকা: এই পোকা ঢেঁড়সের কচি পাতা মোড়ায় এবং ভিতরে থেকে পাতার সবুজ অংশ খায়। আক্রমনের মাত্রা বেশি হলে সুমিথিয়ন/ফলিথিয়ন /নিক্সইয়ন ৫০ ইসি ২ মিলি/ লিটার পানিতে (হেক্টর প্রতি) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ডগা, কান্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা: এ পোকার কীড়া গাছের কচি ফল ও কান্ড ছিদ্র করে ও ভিতরে কুড়ে কুড়ে খায়। রিপকর্ড ১ মিলি/ সবিক্রন ২ মিলি /সুমিথিয়ন ২ মিলি /ডায়াজিনন ২ মিলি /লিটার পানিতে (হেক্টর প্রতি ) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
জ্যাসিড বা সাদা মাছি পোকা: এ পোকা ঢেঁড়সের চারা গাছ থেকে শেষ পর্যন্ত পাতার রস চুষে খায়। আক্রান্ত পাতা বিবর্ণ ও কুঁকড়ে যায়। টাফগর / সানগর ২ মিলি,/ এডমায়ার ০.৫ মিলি/ একতারা ০.২৫ গ্রাম / লিটার লিটার পানি স্প্রে করতে হবে।

রোগ বালাই:
ঢ়েঁড়সের মোজাইক ভাইরাস রোগঃ এ রোগে পাতাগুলোতে হলুদ ও সবুজ রংয়ের মোজাইক দেখা যায়। পাতা কুঁকড়ে যেতে পারে এবং গাছের বৃদ্ধি ও ফলন খুব কমে যায়। এ রোগের কোন ঔষধ নেই। আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট করে দিতে হবে। জমিতে পানি নিষ্কাশন করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ থেকে বীজ ব্যবহার করা উচিত নয়। এ রোগ সাধারণত সাদা মাছি দ্বারা বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি দমনের জন্য টাফগর / সানগর ২ মিলি,/ এডমায়ার ০.৫ মিলি/ একতারা ০.২৫ গ্রাম/ রগর বা রক্সিয়ন ২ মিলি / লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া ভাইরাস প্রতিরোধক জাত ব্যবহার করা ভালো। যেমন- বারি ঢেঁড়স-১, ওকে-০২৮৫ জাত।
ঢ়েঁড়সের পাতার শিরা স্বচ্ছতা রোগঃ সব পাতাই হলুদ ও সবুজ ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। পাতার শিরাগুলো স্বচ্ছ ও হলুদ হয়ে যায়। গাছের পাতা ছোট ও খর্বাকৃতি হয়। ভাইরাসের বাহক পোকা সাদা মাছি এ রোগ ছড়ায়। সাদা মাছি দমনের জন্য টাফগর / সানগর ২ মিলি,/ এডমায়ার ০.৫ মিলি/ একতারা ০.২৫ গ্রাম/ রগর বা রক্সিয়ন ২ মিলি / লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।

ঢ়েঁড়সের পাতার দাগ রোগঃ অল্টারনারিয়া ছত্রাক দ্বারা আক্রমনের ফলে পাতার উপরে বিভিন্ন আকৃতির গোলাকার বাদামি রং পড়ে। রোগের মাত্রা বেশি হলে পাতা মুচড়িয়ে যায় এবং পরে ঝলসে ঝরে পরে। ব্যাভিস্টিন ১ গ্রাম/ রোভরাল ২ গ্রাম/ডাইথেন এম-৪৫ ২ গ্রাম/লিটার পানিতে পাতায় ২/১ টি দাগ দেখা দিলে স্প্রে করতে হবে।

ঢ়েঁড়সের শিকড়ের গিঁট রোগঃ আক্রান্ত গাছের শিকড়ে প্রচুর গিঁট দেখা যায়। গাছের পাতা ছোট ও খর্বাকৃতি হয় এবং ফল কম হয়। ফুরাডান/মিরাল ব্যবহার করতে হবে।

সবজির জন্য ফসল সংগ্রহ

চারা গজানোর ৪০-৪৫ দিন পর ঢেঁড়স গাছ ফুল দিতে শুরু করে। ফুল বের হওয়ার ৩ দিন (গ্রীষ্মকাল) এবং ৫ দিন (শীতকাল) পর ঢেঁড়স ৬-১০ সে.মি. লম্বা হয়। এ সময় ঢেঁড়সের ফল নরম থাকে এবং আঙ্গুল দ্বারা সহজেই ভাঙ্গা যায়। সবজি হিসেবে ঢেঁড়সের গুণাগুণ ঠিক রাখতে হলে ধারালো ছুরির সাহায্যে গাছ থেকে ঢেঁড়স কাটা উচিত। সবজি হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় ৮-১০ টন/হেক্টর (বারি ঢেঁড়স-১ এ ১৪-১৬ টন/হেক্টর )।

বীজের জন্য ফসল সংগ্রহ

বীজ বুনার প্রায় ১২০-১৩০ দিনের মধ্যে ঢেঁড়সগুলো শুকিয়ে লম্বালম্বিভাবে ফাটতে শুরু করে। ঢেঁড়স শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধারালো ছুরি দিয়ে পাকা ফলগুলো সংগ্রহ করে ও রোদে ভালো করে শুকিয়ে মাড়াই করার পর বীজ ঠান্ডা করে প্লাষ্টিক ব্যাগে ভরে রাখতে হবে। বীজ হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় ১০০-১৫০ কেজি/ হেক্টর।



সৌজন্যে---------------------


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url