নারিকেল মাকড়সার আক্রমণের লক্ষণ ও প্রতিকার।








নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। ব্যবহার বৈচিত্র্যে এটি একটি অতুলনীয় উদ্ভিদ। নারিকেল গাছের প্রতিটি অঙ্গই কোন না কোন কাজে লাগে। খাদ্য-পানীয় থেকে শুরু করে গৃহ নির্মাণের সরঞ্জাম, পশু খাদ্য ইত্যাদি উপকরণ নারিকেল গাছ থেকে পাওয়া যায়। এজন্য নারিকেল গাছকে স¦র্গীয় বৃক্ষ বলা হয়। বাংলাদেশের সব জেলাতেই নারিকেল জন্মায়। তবে উপকূলীয় জেলাসমূহে এর উৎপাদন বেশি। বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট নারিকেলের ৩৫-৪০% ডাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নারিকেলের শাঁসে সেড়বহ জাতীয় পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। ডাবের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে। খাবার স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে ডাবের পানি অত্যন্ত কার্যকরী।


নারিকেল মাকড়সার আক্রমণের লক্ষণ ও প্রতিকার। 


বর্তমানে নারিকেলের মাকড়ের বা  (Mite) আক্রমন খুব সাধারণ বিষয়। নারিকেলের মাকড়সার কারণে নারকেল চাষ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখানে নারিকেলের বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত ফল । নারকেল পাতা, ফুল, ফল, কান্ড, শিকড় এবং প্রায় প্রতিটি অংশই কোনও না কোনও শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তবে এই নারকেল গাছটি সারা বছর বিভিন্ন রোগ এবং পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। নারিকেলের মাকড়সা সম্পর্কিত কিছু তথ্য এখানে রয়েছে:-


নারিকেলের উপর  মাকড়সার আক্রমণের লক্ষণ দেওয়া হলো:-মাকড়সার দ্বারা আক্রমণ হলে, কচি বা ছোট ডাব নারিকেলের উপর বাদামি রং হয়ে যায় এবং যখন নারিকেল হয়, তখন নারিকেলের খোসার উপর ফাটা শুকনো বাদামী দাগগুলি উপস্থিত হয়।নারিকেলের খোলের উপর বাদামি দাগ দেখা যায় এবং এই ফাটলযুক্ত দাগ থেকে আটা জাতীয় পদার্থ বেরিয়ে আসে।মাকড়সা দ্বারা আক্রান্ত নারিকেলের আকার  ছোট এবং শক্ত হয়ে যায়।


মাকড় আক্রমণে নারিকেলের স্বাভাবিক রং থাকে না  বিবর্ণ ধুসর হয়ে যায়।মাকড়-আক্রান্ত নারিকেল পাকা বা ঝুনা হওয়ার আগেই এটি বিকৃত হয়ে পড়ে  এবং বেকে যায়।দুই মাস বয়সী নারিকেলের মুচি মাকড়সার  বেশি আক্রমন করে এবং ছয় মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত সংক্রামিত ফল থেকে রস চুষে খায় ।




নারিকেলের গাছে মাকড়সার আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে নারিকেলের গাছটি  ফল শূন্য হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, এই সময়ে মাকড় গুলি খাদ্যের সন্ধানে গাছের কচি পাতায় চলে যায় ।বেশিরভাগ মাকড়শা নারিকেলের গাছের৩-৪ মাস বয়সী নারিকেলে বেশি থাকতে দেখা যায়।

মাকড়সার প্রতিকার:নারিকেলের গাছগুলিতে মাকড়সা সাধারণত কান্ডের  বা বোটা নিকটে কান্ডের বা বোটার নীচে লুকায়। তাই মাকড়নাশক প্রয়োগ করা হলে এগুলি সহজে মারা যায় না। নারিকেলের গাছ ছাড়া মাকড়সারা বেঁচে থাকতে পারে না। কচি নারকেলগুলিতে তারা সচেতন অবস্থায় দলগতো ভাবে  থাকে । শীতকাল মাকড়সা নিয়ন্ত্রণের সেরা সময়, তাই শীতের আগে গাছ থেকে আক্রান্ত ফলগুলি অপসারণ করুন এবং গাছের মাথার মাকড়নাশক স্প্রে করে মাকড়শা ধ্বংস করুন। মাকড়সা নিয়ন্ত্রণ  জন্য নিম্নলিখিত কয়একটি পদক্ষেপ দেখানো হয়েছে-





পদক্ষেপ ১ : শীত শুরুর আগে আশ্বিন-কার্তিক মাসে (অক্টোবরের মাঝামাঝি-নভেম্বরের মাঝামাঝি) সমস্ত বিকৃত নারিকেলের  ২-৫ মাস বয়সী নারকেল কেটে মাটিতে পুড়িয়ে মাটির নীচে পুঁতে দিতে হবে। যাতে মাকড়সাগুলি সেই থেকে অন্য কোনও গাছে ছড়িয়ে না যায়।


পদক্ষেপ ২: কান্দি সংলগ্ন অঞ্চল এবং কচি পাতাগুলিতে আশ্বিন-কার্তিকের (মধ্য অক্টোবর-মাঝামাঝি) ১.৫-২ মিলি / মাকড়নাশক  ইত্যাদির গাছের মাথা পরিষ্কার করার পরে ( রনভিট / একামাইট/ওমাইট / সুমাইট /) ইত্যাদি লিটারের হারে এটি পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।

পদক্ষেপ ৩: ফাল্গুন-চৈত্র (মধ্য ফেব্রুয়ারি-মধ্য মার্চ) মাসে প্রথমবারের মতো নারিকেলের গাছে মাকড়নাশাক  প্রয়োগের ২ মাস পরে একই পরিমাণে মাকড়নাশাক দ্বিতীয় ডোজ নারকেল গাছে স্প্রে করা উচিত ।


পদক্ষেপ ৪: বৈশাখ মাসে চৈত্র থেকে তৃতীয় বার স্প্রে করার আগে (মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য-মে) পাকা ডাব এবং নারকেল সংগ্রহের পরে আগের মতো একই হারে মাকড়নাশাক স্প্রে করা উচিত।

পদক্ষেপ ৫: জ্যেষ্ঠ-আশার মাসে (মে-মধ্য-জুন) চতুর্থ ধাপের মতো, মাকড়নাশাক শেষ স্প্রে করা উচিত। সুতরাং, ৫ পদক্ষেপে মাকড়সা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হয়ে জাবে।

সৌজন্যে---------------------

Amin
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url