পেয়ারা চাষ।

পেয়ারার উচ্চ ফলন।

 পেয়ারার উচ্চ ফলন।

(এক্সপার্ট চাষীরাও পড়ুন)

.আমাদের অতি পরিচিত ফল হলো পেয়ারা । পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। অনেকের ছাদে শোভা পাচ্ছে পেয়ারার গাছ। ছাদের উপর বা বেলকুনিতে পেয়ারা চাষ করতে অনেকেই পছন্দ করেন। এটা বেশ সহজে এবং ফলনও পাওয়া যায় সহজে । কিছু কৌশল অবলম্বন করে মাটিতে চাষের চেয়ে অনেক বেশি ফলন ছাদের টবেই পাওয়া যায়। আর, দেশি ফলের মধ্যে আমলকির পরে পেয়ারাতেই সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আসুন, টবে পেয়ারা চাষ পদ্ধতিটা দেখে নেই।

সাধারণত, গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপনিবেশীয় অঞ্চলের জলবায়ু পেয়ারা উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। পেয়ারা জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশযুক্ত মাটি ভারী আটাল মাটিতে ভাল জন্মে ।
বীজ দ্বারা চারা করা খুব সহজ। তবে বীজ ছাড়া মাতৃতান্ত্রিক পেয়ারা পাওয়া যায় না। বীজের চেয়ে কলমের মাধ্যমে বর্তমান বেশি রোপন করা হচ্ছে । তবে আজকাল দেখা যায় চারাগুলি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং বাগানগুলি প্রচুর হারে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
.
মাটি প্রস্তুতকরণ:-
------------------------
কমপক্ষে ১২ ইঞ্চি টব হতে হবে। যত বড় টব হবে তত ভাল। টবের অর্ধেক মাটি, অর্ধেক জৈব সার, কিছু সরিষার খৈল, কিছু হাড়ের গুঁড়া, অল্প পটাশ সার, আন্দাজ মতো কোকোপিট একসাথে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার ১৫-২০ দিন রেখে দিন, এর মধ্যে কয়েক দিন পর পর মাটি গুলো উল্টে-পাল্টে দিন।
.
চারা রোপণ:-
---------------------
নার্সারি থেকে কলম চারা সংগ্রহ করুন। চারার মূল কাণ্ডটি মজবুত হওয়া বাঞ্ছনীয়। গাছের পাতায় যেন ছত্রাক বা অন্য কোনো ধরণের রোগ না থাকে। টবে মাটি প্রস্তুতের ১৫-২০ দিন পর চারাটি সযত্নে টবে বসিয়ে দিয়ে টবে ভরপুর পানি দিন। গাছ অবশ্যই সবসময় রোদযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। কম রোদে গাছ বাঁচলেও ফলন প্রায় হয় না।
.
গাছের পরিচর্যা:-
-----------------------------
গাছে প্রতিদিন পানি দিতে হবে, যেন মাটি শুকিয়ে না যায়। গ্রীষ্মে দরকার হলে দিনে ২ বার পানি দিতে হবে। ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর মাটি কিছুটা খুঁচিয়ে দিতে হবে। ১ বছর পর টবের আংশিক মাটি পরিবর্তন করে দিতে হবে। ২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৮ ইঞ্চি গভীরে শিকড়সহ মাটি ফেলে দিয়ে নতুন সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে তা ভরে দিতে হবে।
চারা রোপণের ৪/৫ মাস পর থেকে নিয়মিত ১৫-২০ দিন পর পর সরিষার খৈল পঁচা পানি প্রয়োগ করতে হবে। খৈল ১০ দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেই পঁচা পানি পাতলা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। প্রতি মাসে ১ চামচ ইউরিয়া, ২ চামচ হাড় গুঁড়া ও ১ চামচ পটাশ ভাল করে মিশিয়ে টবে প্রয়োগ করতে হবে।
মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে গাছে জিঙ্ক ও বোরোন স্প্রে করতে হবে। বাজারে জিঙ্ক ও বোরোন মাইক্রো নিউট্রিয়েন্স নামে পাওয়া যায়। ১ লিটার পানিতে ৩০ ফোটা দিয়ে স্প্রে করতে হবে।
.
ডালপালা ছাটাই:-
---------------
ছাদের গাছ যতটা সম্ভব ছোট রাখতে হবে। ডালপালা বড় হলে ফলন কম হবে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ডাল কেটে দিতে হবে। এর কয়েকদিন পর কাণ্ডের পাশ থেকে শাখা বের হবে। তার মধ্যে কয়েকটি শাখা রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলুন। গাছের দূর্বল ডাল সর্বদা ছাটাই করে দিন।
.
হরমোন প্রয়োগ
রোপণের ২ বছর পর হরমোন প্রয়োগ করা যায়। হরমোন হিসেবে ২,৪-ডি; ন্যাপথালিন এসিটিক এসিড (এনএএ), ১০% ইউরিয়ার দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। এই দ্রবণ স্প্রে করে গাছের পাতা ভিজিয়ে দিতে হবে। কয়েক দিনের মধ্যে পাতা লালচে হয়ে ঝরে যেতে পারে। পরবর্তীতে সঠিক পরিচর্যায় নতুন পাতা জন্মাবে এবং অসময়ে ফলধারণ হবে। তবে, গাছে ফল থাকা অবস্থায় এটা করবেন না।
.
ডাল বাঁকানো:-
---------------------
পেয়ারার ডাল বাঁকালেই প্রায় দশগুণ বেশি ফলন হয় এবং সারা বছর ফল ধরানো সম্ভব হয়। ফলের মৌসুমে গাছের ফুল ছিঁড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরও প্রভাবিত করা যায়। গ্রীষ্ম ও হেমন্তে গাছের শাখা-প্রশাখার নিয়ন্ত্রিত বিন্যাস করেই এটি নিশ্চিত করা সম্ভব। গাছের বয়স দেড় থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে ফলন বাড়ানো সম্ভব।
ডাল বাঁকানোর ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গাছের গোঁড়ায় সার ও পানি দিতে হয়। প্রতিটি শাখার অগ্রভাগের প্রায় এক থেকে দেড়ফুট জায়গার পাতা ও ফুল-ফল রেখে বাকি অংশ ছেটে দিতে হয়। এরপর ডালগুলোকে সুতা দিয়ে বেঁধে তা বাঁকিয়ে মাটির কাছাকাছি করে গাছের সাথে বা খুঁটির মাধ্যমে মাটিতে বেঁধে দিতে হয়।
গ্রীষ্মকালে মাত্র ১০-১২ দিন পরেই নতুন ডাল গজানো শুরু হয়। আর হেমন্তকালে নতুন ডাল গজাতে ২০-২৫ দিন সময় লাগে। নতুন ডাল ১ সেমি. লম্বা হলে বাঁধন খুলে দেয়া হয়। ডাল বাঁকানোর ৪৫ থেকে ৬০ দিন পরে ফুল ধরা শুরু হয়। এভাবে গজানো প্রায় প্রতি পাতার কোলেই ফুল আসে। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ফলন পাওয়া যায়।
.
ফল পাতলাকরণ:-
---------------------------
পেয়ারা গাছে প্রচুরসংখ্যক ফুল ও ফল আসে। সব রেখে দিলে ফল আকারে ছোট ও নিম্নমানের হয়। তাই, গাছকে দীর্ঘদিন ফলবান রাখতে ও মানসম্পন্ন ফল পেতে হলে প্রথমেই কিছু ফুল এবং পরে ফল ছোট থাকা অবস্থায় ৫০-৬০% ফল পাতলা করে দেয়া দরকার। কলমের গাছের ক্ষেত্রে প্রথম বছর ফল নেয়া উচিৎ নয়।
.
ফ্রুট ব্যাগিং:-
-----------------
পেয়ারা ছোট অবস্থাতে ব্যাগিং করলে রোগ ও পোকামাকড় রক্ষা করা যায়। এছাড়াও সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে প্রতিহত হয়। এতে কোষ বিভাজন বেশি হয় এবং ফল আকারে বড় হয়। বাদামি কাগজ বা ছোট ছিদ্রযুক্ত পলিথিন দিয়ে ব্যাগিং করা যেতে পারে। এর আগে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ০.৫ মিলি হারে টিল্ট ২৫০ ইসি মিশিয়ে ফলের উপর ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url