সারের কাজ কি? অভাবজনিত লক্ষণ ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলাফল কি?

 সারের কাজ কি?

অভাবজনিত লক্ষণ ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলাফল কি?

যে উপাদান সাধারণত আমাদের গাছপালার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে থাকে তাকে আমরা সার বলি । বাংলাদেশের কৃষিতে মূলত যে সব সার ব্যবহার হয়- ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বোরন । এ সব সারগুলোর কাজ কি , ঘাটতি বা অভাবজনিত লক্ষণ গুলি কি,মাত্রা অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

ইউরিয়া সারের কাজঃ- একটি নাইট্রোজেন সংবলিত রাসায়নিক সার হলো ইউরিয়া যা ব্যাপক হারে ফসলের জমিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইউরিয়া সারে নাইট্রোজেনের উপস্হিতি থাকে ৪৬%। ইউরিয়া সার ফসলের শিকড় বৃদ্ধিও বিস্তাররে সহায়তা করে থাকে। গাছের ও শাকসবজির পর্যাপ্ত পরিমাণ পাতা, ডালপালা ও কান্ড তৈরি বা বিস্তারের সাহায্য করে থাকে। ইউরিয়া সার ক্লোরোফিল উৎপাদনের জন্য সাহাজ্য করে যা গাছপালাকে গাঢ় সবুজ বর্ণ প্রদান করে থাকে। কুশি ,ফুলও ফলের আকার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শর্করা ও প্রোটিন সমনে উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও গাছের অন্যান্য সব আবশ্যক উপাদানের পরিশোষণের হার বাড়িয়ে দেয়।


নাইট্রোজেনের অভাবজনিত লক্ষণঃ- মাটিতে নাইট্রোজেন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি বা অভাব দেখা দিলে ক্লোরোফিল সংশ্লেষণের হার অনেকাংশে কমে যায় যার ফলে গাছ তার স্বাভাবিক সবুজ রং হারিয়ে ফেলে। এছাড়াও পাতার আকার ছোট হয়ে শাখা প্রশাখার বৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে থাকে এবং গাছ খাটো হয়ে যায়। পাতার অগ্রভাগ থেকে বিবর্ণতা শুরু হয় এবং বৃন্ত ও শাখা প্রশাখা সরু হতে থাকে। গোলাপি অথবা হালকা লাল রঙের অস্বাভাবিক বৃন্ত হয়ে থাকে। পুরাতন পাতা হলুদাভ-বাদামি বর্ণ ধারণ করে পাতা অকালেই ঝরে পড়ে। ফুল ও ফলের আকার ছোট হয়ে যায়র এবং ফলন কমতে থাকে।
পশুসমুহের দেহে নাইট্রোজেন বিশিষ্ট যোগসমুহের বিপাক প্রক্রিয়াতে ইউরিয়া একটি বড় ভুমিকা পালন করে। স্তন্যপায়ী প্রানীদের মুত্রে নাইট্রোজেন ধারা যোগের মধ্যে ইউরিয়া প্রধান। ইউরিয়া কঠিন, বন্নহীন, গন্ধহীন,ক্ষারধমী নয়। অম্লধমী নয় পানিতে সহজে দ্রব্য ও তুলনামুলক অবিষাক্ত।


ইউরিয়া বেশি মাত্রায় প্রয়োগের ফলাফলঃ-
ইউরিয়া সারের প্রয়োগের মাত্রা বেশি হলে গাছ দুর্বল হয়ে যায়এবং গাছে ফুল ও ফল উৎপাদন কিছুটা বিলম্বিত হয়ে যায়। এছাড়াও পোকামাকড় ও রোগ আক্রমণের পরিমাণ বাড়তে থাকে, অনেক সময় পাতার অংশ ভারি হয়ে গাছ হেলে যেতে থাকে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন প্রয়োগের কারণে অনেক ফল পানসে হয়ে যায়।

নাইট্রোজেন(ইউরিয়া) অতিরিক্ত ব্যাবহারের কুফল:
১.সাধারনত গাছের কোষপ্রাচীর পাতলা হওয়ায় কাঠামোতে শক্তি কমে যায়।
২.গাছের কান্ড লম্বা ও নরম হয়।
৩.কান্ডের চেয়ে পাতা বেশি ভারী হয় ফলে গাছ সহজেই ঢলে পড়ে।
৪.গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।ফলে রোগ পোকামাকড় সহজেই আক্রমন করতে পারে।
৫.নাইট্রোজেন বেশি ব্যাবহারে মাটিতে copper, zink, boron. এগুলোর ঘাটতি দেখা যায়।

নাইট্রোজেন(ইউরিয়া) এর কাজ:

১.দানা জাতীয় ফসলে অধিক কুশী হয়।
২.উদ্ভিদের পাতা গাঢ় ও সবুজ করে।
৩.ক্লোরোফিল গঠনে সহায়তা করে ফলে গাছের জীবনি শক্তি বাড়ে।
৪.দানা জাতীয় ফসলে পুষ্টিতা বাড়ায় আমিষ বেড়ে যায়।
৫.উদ্ভিদের শরীরতাত্তিক ভাবে বাড়তে সহায়তা করে তাই ফল ও ফুলের আকার বড় হয়।
৬.শাকসব্জী জাতীয় গাছে অধিক পরিমান পাতা বাড়ায়/ গজায়।
৭.গাছের দেহকে নরম ও শাসালো করে।
৮.গাছের বড় হতে যে হরমোন প্রয়োজন সেটি করে।
৯.ফসফরাস ও পটাশিয়ামের কাজ অনেকটা পুরন করে।
১০. বিভিন্ন হরমোন গঠন করে যা গাছের জীবন চক্রের জন্য প্রয়োজন।
১১. মুলরোমের ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা বাড়ায়।
নাইট্রোজেন(ইউরিয়ার)অভাবজনিত লক্ষন:
১.গাছ বাড়তে পারেনা।
২.দানাজাতীয় শস্যের কুশি কম হয়।
৩.ঘাটতি প্রকট হলে পুরাতন পাতা বাদামী হয়।
৪.গাছের গোড়ার পাতা প্রথমে হালকা সবুজ হয়
৫. উদ্ভিদের সাধারন শকরা উতপাদন ক্ষমতা কমে যায় পরে আস্তে আস্তে হলুদ হয়ে যায়।
৬.গাছের পাতা আগাম ঝরে যায় ফলে গাছ বাড়তে পারেনা।
৭. চিকন ও খাটো কুড়ি দেখা যায় ফলে গাছের ফল বীজ ছোট হয়।
৮.সঠিক সময়ের আগেই গাছের পরিপক্কতা আসে।
৯.নাইট্রোজেনের অভাবে গাছের শিকড়ের বিস্ততি কমে যায়।
১০.লতা জাতীয় গাছ কুকড়িয়ে যায়। পাশের কুশি শুকিয়ে যায়।


টিএসপি, ডিএপি বা ফসফেট জাতীয় সারের কাজঃ-
টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও ডিএপি (ডাই এ্যামোনিয়াম ফসফেট)-এই দুটোই হলো - ফসফেট জাতীয় রাসায়নিক সার, যা এই সার দুটোতে শতকরা ২০( ভাগ) ফসফরাস দ্বারা গঠিত । টিএসপিতে শতকরা ১৩ ভাগ ক্যালসিয়াম এবং ১.৩ ভাগ গন্ধক থাকে। ডিএপিতে ফসফেট ছাড়াও ১৮% নাইট্রোজেন বিদ্যমান থাকার কারনে ডিএপি সার প্রয়োগে ক্ষত্রে বিঘা প্রতি ৫ কেজি ইউরিয়া সার কম দিতে হয়।
ফসফরাস জাতীয় সার কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করে এবং শর্করা উৎপাদন ও আত্তীকরণে সহায়তা করে থাকে। গাছের মূল বা শিকড় গঠন কাঠামোর ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। গাছের গঠন কাঠামো শক্ত করে গাছকে নেতিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে থাকে,ফলের পরিপক্কতা ত্বরান্বিত করে থাকে। ফুল, ফল ও বীজের গুণগত মান বাড়াতে সহায়তা করে থাকে।
ফসফরাসের ঘটতিজনিত লক্ষণঃ -ফসফরাসের ঘাটতি দেখা দিলে মাটিতে , কাণ্ড ও মূলের বৃদ্ধি হ্রাস পায়। । গাছের পুরোনো পাতা অসময়ে ঝরে পড়ে , ফুলের উৎপাদন, পার্শ্বীয় কাণ্ড এবং কুড়ির বৃদ্ধি অনেকাংশে কমে যায়। পাতার গোড়া রক্তবর্ণ বা ব্রোনজ রং ধারণ করে থাকে, সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং পাতার কিনারে বাদামি বর্ণ হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে। এছাড়াও গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় দিনে দিনে।

ফসফরাসের মাত্রা বেশি হলেঃ- ফসফরাস প্রয়োগের পরিমাণ বেশি হলে ফলন কমে যায়, গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং অকাল ফল পরিপক্বতা পরিলক্ষিত হয়।
এমপি সার বা পটাশ সারের কাজঃ- এমওপি বা মিউরেট অব পটাশে শতকরা ৫০% ভাগ পটাশিয়াম থাকে। এমওপি উদ্ভিদ কোষেকে রক্ষা করে,,। উদ্ভিদে শর্করা বা শ্বেতসার দ্রব্য পরিবহনে সহায়তা করে থাকে ,লৌহ ও ম্যাংগানিজের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে থাকে । প্রোটিন বা ,আমিষ উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। উদ্ভিদে পানি পরিশোষণ, আত্তীকরণ ও চলাচলে অর্থাৎ সার্বিক নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে থাকে । গাছের কাঠামো শক্ত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ে থাকে। নাইট্রোজেন ও ফসফরাস পরিশোষণে সমতা বজায় রাখেতে যথাযোথ ভুমিকা রাখে।

এমওপি সারের ঘাটতিজনিত লক্ষণ গুলি:- গাছে পটাশ সারের ঘাটতি দেখা গেলে পুরাতন পাতার কিনারা থেকে বিবর্ণতা শুরু হতে থাকে । পরে পাতার আন্তঃশিরায় বাদামি বর্ণের টিস্যু দেখা দিতে থাকে । এছাড়াও পাতার উপরিভাগে কুঞ্চিত হতে বা ভাঁজ পড়তে দেখা যায়। গাছ বিকৃত আকার ধারণ করে এবং গাছের ছোট আন্তঃপর্বসহ বৃদ্ধি কমে যায়। এবং বর্তীতে প্রধান কাণ্ডটি মাটির দিকে হেলে পড়ে। গাছে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেড়ে যেতে থাকে ।


পটাশের পরিমাণ বেশি হলেঃ- জমিতে বা গাছে পটাশ প্রয়োগের পরিমাণ বেশি হলে ক্যালসিয়াম ও বোরনের শোষণ হার কমে যায় যার ফলে বোরনের অভাবজনিত লক্ষণ দেখা যায়। পানি নিঃসরণের হার কমে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেতে থাকে ।


জিপসাম সারের কাজঃ- জিপসাম সারে শতকরা ১৭% (ভাাগ) গন্ধক এবং ২৩ %(ভাগ) ক্যালসিয়াম রয়েছে। জিপসাম বা গন্ধক প্রোটিন বা আমিষ উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে ,তেল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা ক্লোরোফিল গঠনে ভূমিকা রাখে এবং গাছের বর্ণ সবুজ করে তোলে । বীজ উৎপাদন এবং হরমোনের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে ।


জিপসামের অভাবজনিত লক্ষণঃ- মাটিতে গন্ধকের অভাব হলে গাছের সবুজ বর্ণ নষ্ট হয়ে কাণ্ড চিকণ হয়ে যায়, গাছের পাতা ফ্যাকাশে সবুজ বা হলুদ বর্ণ ধারণ করে থাকে ফলন হ্রাস পাই।
জিপসাম প্রয়োগের মাত্রায় বেশি হলেঃ- জমিতে জিপসাম প্রয়োগের পরিমাণ বেশি হলে শিকড়ের বৃদ্ধি কমে যায়। ফলে গাছের শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম কমে যায় এবং ফলন হ্রাস পাই।

জিংক সালফেট সারের কাজঃ- সালফেট ( মনোহাইড্রেটে ) শতকরা ৩৬.% (ভাগ) দস্তা এবং ১৭.৬ %(ভাগ )গন্ধক রয়েছে। অপরদিকে জিংক সালফেট ( হেপটাহাইড্রেটে ) দস্তা ও গন্ধকের যথাক্রমে ২১.০ % (ভাগ) এবং ১০.৫%(ভাগ) রয়েছে। এছাড়াও চিলেটেড জিংকে ১০ %(ভাগ) দস্তা রয়েছে। জিংক সালফেট (মোনোহাইড্রেট), জিংক সালফেট (হেপটাহাইড্রেট) সারের তুলনায় বেশি পরিমাণে মাটিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কোনো কোনো ফসলে স্প্রে করেও এটি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে ।

ধরনের হরমোন তৈরিতে দস্তা বা জিংক অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন গাছের । ক্লোরোফিল তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ফলন বাড়িয়ে দেয়। শিম জাতীয় সবজির ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ফলন বাড়ে।

জিংকের অভাবজনিত লক্ষণঃ- দস্তার ঘাটতি দেখা গেলে মাটিতে, গাছের পাতায় তামাটে ( দাগ) আকারে বিবর্ণতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। পাতা ছোট হয়ে যায় এবং নতুন পাতার গোড়ার দিক হতে বিবর্ণতা দেখা হতে দেখা যায়। বিশেষ করে আন্তঃশিরায় বিবর্ণতা বেশি হয়ে থাকে ।
জিংক প্রয়োগের মাত্রা বেশি হলে যা হয়:- জমিতে জিংকের পরিমাণ বেশি হলে গাছে বিষক্রিয়া তৈরি করে। এছাড়াও অতিরিক্ত দস্তা প্রয়োগে আমিষ উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং ফলন হ্রাস পাই।

বোরন সারের কাজঃ- বরিক এসিডে ১৭ % (ভাগ) এবং সলুবোর বোরণে ২০% (ভাগ) বোরণ থাকে। এটি গাছের কোষ বৃদ্ধিতে এবং পাতা ও ফুলের রং আকর্ষণীয় করে তোলে । বীজ উৎপাদনে , বীজের গঠেনে সাহায্য করে এবং চিটা হওয়া রোধে কাজ করে থাকে। বোরন গাছে ফুল ও ফল ধারণে সাহায্য করে এবং ফলের বিকৃতি রোধ সহায়তা করে এবং ব্যাপকভাবে ফলন বাড়ায়

বোরনের ঘাটতিজনিত লক্ষণঃ- বোরন সারের অভাবে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং গাছে ফুল সংখ্যায় কম আসে ,ব্যাপকভাবে ফলন কমে আসে । এছাড়াও গাছ মরে যায়, কাণ্ড কালো বর্ণ ধারণ করে, শিকড়ের বৃদ্ধি কমে যায়। সবজি বা ফসলের ফুল ঝরা বেড়ে যায়। ফল আকারে ছোট হয় এবং ফেটে যায়।গাছ বা ফসলের ফলের আকার বিকৃত হয়ে ও অপরিপক্ক অবস্থায় ফল ঝরে যায়।
বোরন প্রয়োগের পরিমাণ বেশি হলেঃ --বোরণের প্রয়োগ মাত্রা বেশি হলে কচি পাতা ও ফুল এবং ডগা
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফলন অনেক কমে আসে ।



কৃষি ও কৃষকের সাথে সম্পৃক্ত একজনের জানা যা একান্ত জরুরি ।


ভেজাল সার চেনার উপায়: কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সারে ভেজাল দ্রব্য মিশিয়ে নকল সার বা ভেজাল সার তৈরি ও বিক্রি করছেন। একটু সতর্ক হলেই আসল সার ও ভেজাল সারের পার্থক্য বুঝতে পারা যায়। এখানে কয়েকটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে আসল বা ভেজাল সার শনাক্ত করার উপায় সম্পর্কে জানানো হলো:

১) ইউরিয়া সার চেনার উপায়:

আসল ইউরিয়া সারের দানাগুলো সমান হয়। তাই কেনার সময় প্রথমেই দেখে নিতে হবে যে সারের দানাগুলো সমান কিনা। ইউরিয়া সারে কাঁচের গুড়া অথবা লবণ ভেজাল হিসাবে যোগ করা হয়। চা চামচে অল্প পরিমান ইউরিয়া সার নিয়ে তাপ দিলে এক মিনিটের মধ্যে অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ তৈরি হয়ে সারটি গলে যাবে। যদি ঝাঁঝালো গন্ধ সহ গলে না যায়, তবে বুঝতে হবে সারটি ভেজাল।

২) টিএসপি সার চেনার উপায়:
টিএসপি সার পানিতে মিশালে সাথে সাথে গলবে না। আসল টিএসপি সার ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পর পানির সাথে মিশবে। কিন্তু ভেজাল টিএসপি সার পানির সাথে মিশালে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই গলে যাবে বা পানির সাথে মিশে যাবে।

৩) ডিএপি সার চেনার উপায়:
ডিএপি সার চেনার জন্য চামচে অল্প পরিমান ডিএপি সার নিয়ে একটু গরম করলে এক মিনিটের মধ্যে অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ হয়ে তা গলে যাবে। যদি না গলে তবে বুঝতে হবে সারটি সম্পূর্ণরুপে ভেজাল। আর যদি আংশিকভাবে গলে যায় তবে বুঝতে হবে সারটি আংশিক পরিমান ভেজাল আছে। এছাড়াও কিছু পরিমান ডিএপি সার হাতের মুঠোয় নিয়ে চুন যোগ করে ডলা দিলে অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ বের হবে। যদি অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ বের না হয় তাহলে বুঝতে হবে সারটি ভেজাল।

৪) এমওপি বা পটাশ সার চেনার উপায়:
পটাশ সারের সাথে ইটের গুড়া ভেজাল হিসাবে মিশিয়ে দেয়া হয়। গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে এমওপি বা পটাশ সার মিশালে সার গলে যাবে। তবে ইট বা অন্য কিছু ভেজাল হিসাবে মিশানো থাকলে তা পানিতে গলে না গিয়ে গ্লাসের তলায় পড়ে থাকবে। তলানি দেখে সহজেই বুঝা যাবে সারটি আসল নাকি ভেজাল।

৫) জিংক সালফেট সার চেনার উপায়:

জিংক সালফেট সারে ভেজাল হিসাবে পটাশিয়াম সালফেট মেশানো হয়। জিংক সালফেট সার চেনার জন্য এক চিলতে জিংক সালফেট হাতের তালুতে নিয়ে তার সাথে সমপরিমান পটাশিয়াম সালফেট নিয়ে ঘষলে ঠান্ডা মনে হবে এবং দইয়ের মতো গলে যাবে।


বীজ, নতুন শিকড় ও গুল্ম জাতীয় গাছের কা-ের অতি সন্নিকটে বা কোনো ভেজা কচি পাতার ওপর রাসায়নিক সার ব্যবহার করা মোটেই উচিত নয়। রাসায়নিক সারগুলো এক ধরনের ঘনীভূত লবণ বিধায় এগুলো গাছের নাজুক সব বাড়ন্ত অংশকে পুড়িয়ে দিতে পারে। সার যত দূর সম্ভব ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা গভীর পানিতে প্রয়োগ করা উচিত নয়। মনে রাখবেন, জিঙ্ক ও ফসফেট সার একত্রে মিশিয়ে প্রয়োগ করা উচিত নয়। কেননা এসব সারের উপাদানগুলো একে অপরের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে যায় এবং ফসল তা গ্রহণ করতে পারে না। জৈব সার ফসল বপন/রোপণের কমপক্ষে ৭-১০ দিন পরে জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে হবে। সবুজ সার হিসেবে ধৈঞ্চা মাটিতে মিশানোর কমপক্ষে ৭ দিন পর ধানের চারা রোপণ করতে হবে। গৌণ উপাদানের (গাছের জন্য যে খাদ্যোপাদান কম প্রয়োজন যেমন জিংক, বোরন, ম্যাঙ্গানিজ এসব) দ্রবণ পাতায় ছিটিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে (বিশেষ করে উদ্যান ফসলের ক্ষেত্রে)। সাধারণ ইউরিয়ার পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে শতকরা ১৫-২০ ভাগ বেশি ফসল পাওয়া যায় এবং পরিমাণে শতকরা ৩০ ভাগ কম লাগে। তাছাড়া গুটি ইউরিয়া মৌসুমে একবার ব্যবহার করতে হয়।

জমিতে তিন পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করা হয়। হাতে ছিটানো, স্থানীয় প্রয়োগ এবং পাতায় বা পল্লব গুচ্ছে সিঞ্চন/ছিটিয়ে দেয়া। হাতে ছিটানো পদ্ধতি সাধারণত মাঠ ফসলে এবং স্থানীয় প্রয়োগ সাধারণত ফল বাগান ও সবজিতে করা হয়। রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলপ্রসূতা বাড়ানোর জন্য ফসল ও মৌসুমের ওপর ভিত্তি করে সার ব্যবহারের সাধারণ নির্দেশাবলি অনুসরণ করা উচিত।

ধান চাষের বেলায় ইউরিয়া ০৩ অংশে ভাগ করে প্রয়োগ করা উচিত। শাকসবজি চাষের বেলায় ফসলের বৃদ্ধির পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ইউরিয়া ২-৩ ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করা যায়। স্বল্পমেয়াদি ফসলের ক্ষেত্রে ইউরিয়া সারের পুরোমাত্রা শেষ চাষের সময়েই প্রয়োগ করা যায়। অধিকাংশ মশলার ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার ২-৩ ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করতে হবে। ভেজা মাটি অথবা জো আসা মাটিতে পড়ন্ত বিকালে ইউরিয়া উপরিপ্রয়োগ করে উত্তমরূপে মিশিয়ে দিলে সর্বাধিক সুফল পাওয়া যায়।

ফসফেট সার জমি তৈরির সময় শেষ চাষের ২/১ দিন আগে প্রয়োগ করা উচিত এবং দস্তা সারও শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির শেষ চাষে পটাশ ও গন্ধক জাতীয় সারগুলো একবারে প্রয়োগ করা চলে। তবে মোটা বুনটযুক্ত মাটিতে পটাশ সার দুইভাগে ভাগ করে ব্যবহার করা যায়।









Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous August 18, 2022 at 8:16 PM

    ধন্যবাদ

Add Comment
comment url