গবাদি পশুর বিভিন্ন রোগ ও তার চিকিৎসা।
গবাদি পশুর বিভিন্ন রোগ ও তার চিকিৎসা।
তাড়কা বা অ্যানথ্রাক্ রোগ:-
----------------------------------
পজিটিভ ব্যাকটিরিয়া সংক্রামিত হয়। বর্ষার স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এই রোগটি বেশি দেখা যায়। গরু, ছাগল, মহিষ এবং ভেড়া এই রোগে আক্রান্ত হয়।
লক্ষণ:-
1.মাথার চুল খাড়া থাকে।
2.বডি তাপমাত্রা ১০৫-১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত।
3. শরীর কাঁপছে, শ্বাস দ্রুত এবং গভীর হয়।
4. নাক, মুখ এবং মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
5.ঘাড়ের পেছনে ত্বকের নিচে তরল জমে থাকে।
পেট ফাঁপা এবং পেটে ব্যথা:-
----------------------------------
1.লক্ষণগুলি শুরুর ১-৩ দিনের মধ্যেই প্রাণীটি নীচে পড়ে মারা যায়।
২.মৃত্যুর সাথে জমাট বাঁধা রক্ত জমাট বাঁধা না।
3.বাম পেটের পরিধি বাড়ে যায়।
4. ক্ষুধা কম থাকে।
5.ভয়েস বিকৃত হয়।
6 চোখ ফুলে গেছে ।
7 প্রস্রাব করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল।
8. দ্রুত শ্বাস ফেলতে থাকে।
9. পশু মুখ খোলা রাখে ।
10.মাটিতে শুয়ে পড়ে।
11. বাম পেটের পরিধি বাড়ে।
ধমনীর প্রদাহ: -
---------------------
পেটে গ্যাসের চাপের কারণে - এটি ফুসফুসে চাপ দেয় এবং রক্তের প্রবাহকে বাধা দেয়, যা প্রাণীর মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করে।
প্রতিরোধ:-
1.প্রথম ৬ মাস বয়সে পশুর টিকা দেওয়া উচিত। ভ্যাকসিনটি এক বছর পরে একবার দেওয়া উচিত
2.আক্রন্ত পশুকে আলাদা রাখতে হবে।
3.পশুর মল, রক্ত এবং শব মাটির নিচে চাপা দিতে হবে।
4.পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, জীবাণু মুক্ত, শুকনো জায়গা লালনপালন করতে হবে।
চিকিত্সা:-
পেনিসিলিন জাতীয় ইনজেকশন দেওয়া যায়।
খুরারোগ:-
---------------------
এটি একটি ভাইরাস রোগ । গবাদি পশু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ইত্যাদির মতো ডাবল খুরের প্রাণীগুলিতে এই রোগ দেখা যায়। স্যাঁতসেঁতে বর্ষার পরিবেশে এই রোগটি বেশি দেখা যায়।
লক্ষণ:
1.মুখ, জিহ্বা এবং পোঁদে ফোস্কা
2. ফোস্কা ফেটে যায়।
3. নাক এবং মুখ থেকে লালা ঝরে।
4.প্রাণীটি অলসভাবে হাঁটে।
5.প্রাণীরা শক্ত কিছু খেতে পারে না।
6. আস্তে আস্তে পায়ের গোড়ালি পড়ে যায়।
7. প্রাণী দুর্বল হয়ে যায়।
8.আক্রান্ত পশুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
9.গরুর দুধ কমে যায়।
প্রতিরোধ:
1.আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা রাখা।
2.পরিষ্কার শুষ্ক জায়গায় রাখতে হবে।
3. কাদা বা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বেধে রাখা যাবে না।
চিকিত্সা:
পটাস মিশ্রত হালকা গরম পানি দিয়ে প্রতিদিন ২-৩ বার ক্ষতটি ধুয়ে ফেলুন।
সোহাগা বোরিক গুঁড়ো মধু বা গ্লিসারিন মিশ্রিত করে ক্ষত প্রয়োগ করতে হবে।
নারকেল তেল এবং টারপেনটিন তেল ৪:১অনুপাতে মিশিয়ে ক্ষতটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
পশুকে নরম খাবার খাওয়াতে হবে।কোন ভাবেই কাদামাটি বা জলে রাখা যাবে না।
ওলান ফোলা / প্রদাহজনিত রোগ :-
----------------------------------------
এই রোগ ব্যাকটিরিয়া দ্বারা হয়। অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতসেঁতে আবাসস্থল এবং নোংরা হাতে দুধের অলান বা বাট থেকে দুধ সংগ্রহ করলে।
লক্ষণ:
1.অলান লাল হয়ে ফুলে যায়।
2.অলান শক্ত এবং গরম এবং ওলানে ব্যথা রয়েছে।
3.রক্তও দুধের সাথে বেরিয়ে আসতে পারে।
4.দেহ ও ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং গরুর দুধ নষ্ট হয়ে যায়।
প্রতিরোধ:-
1.শুকনো ও পরিষ্কার জায়গায় লালন করা উচিত।
2.অলান সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
3.হাত জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত। দুধ সংগ্রহ করার সমায়।
চিকিত্সা:-
অভিজ্ঞ পশুচিকিত্সকের পরামর্শ নিন -
উচ্চ মানের অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন ৪-৫ দিনের জন্য দেওয়া উচিত।
উচ্চমানের প্রদাহনাশক বা স্টেরওয়েড ইঞ্জেকশন দেওয়া উচিত।
উচ্চ মানের Teat infusion আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করা উচিত, ৩-৪ দিন।
Povidon Iodin / ভাল মানের জীবাণুনাশক জলে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার ধুয়ে ফেলতে হবে।
ডায়রিয়া:-
---------------
কারণ:
বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসের আক্রমণে গবাদি পশুর মধ্যে ডায়রিয়া দেখা দেয়। বর্ষাকালে দূষিত খড়, পচা গুল্ম, পচা জল এবং পচা খাবার খাওয়ার ফলে এই রোগ হয়।
লক্ষণ:
1. প্রায়শই পাতলা মল।
2. রক্ত মল দিয়ে বেরিয়ে আসে।
3.পেটের ডান দিকটি চাপ দিলে সাধারণ ব্যথা হয়।
4. পানিস্বল্পতা দেখা দেয় এবং পশু দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রতিরোধ:-
1. টাটকা খাবার খাওয়া উচিত।
2.স্যালাইন খাওয়া উচিত।
3. ট্যাবলেট খাওয়া উচিত।
4. কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করা উচিত।
নিউমোনিয়ার কারণ:-
-------------------------
বিভিন্ন জীবাণু (ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস), আঘাত, ক্লান্তি, সর্দি, বৃষ্টিতে ভেজা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, আর্দ্র আবহাওয়া ইত্যাদির কারণে এই রোগ হয় ।
লক্ষণ:-
1. আক্রান্ত প্রাণীদের প্রথমে হালকা জ্বর এবং কাশি হয় এবং তারপরে ঘন ঘন কাশি হয়।
2.দ্রুত এবং গভীর শ্বাস, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হয় ।
3.শ্বাসের সময় শব্দ হয়।
প্রতিরোধ:
বৃষ্টি, ঠান্ডা, আর্দ্র এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে রাখা যায় না। একটি শুষ্ক এবং উষ্ণ জায়গায় রাখুন।
সৌজন্যে---------------------
গরুর খামার করতে আগ্রহী তাদের জন্য পরিকল্পনা।