অ্যালোভেরা' গাছ

বিভিন্ন ঔষধি গাছ।

অ্যালোভেরা' গাছ।


 ছবি -    'অ্যালোভেরা' গাছ
                                 

ঔষধি গাছ -
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন (WHO) এর মতে যে সব গাছের এক বা একাধিক অংশ প্রাণীর চিকিৎসা ক্ষেত্রে ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাকে ঔষধি গাছ বলে। গাছ যদি হয় বিভিন্ন রোগের ঔষধ, তখন তাকে ছোট করে কেনো দেখবো। আর এটিকে ছোট চিকিৎসা কেন্দ্র বলাই যায়। কিন্তু এই ঔষধি গাছের সঠিক ব্যবহার না জানলে এই ঔষধ রোগের উপশমের বদলে ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াবে। তাই যেনে বুঝে প্রয়োগ করবেন।
এ সব গাছে বিভিন্ন ঔষধি গুণ ও বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
বিভিন্ন ঔষধি গাছ একটি দেশের বা সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। যদি আামরা যথা যথো ব্যবহার করতে পারে, গ্রামাঞ্চলের কবিরাজ গণ প্রাথমিক সেবাদানে এই ঔষধি গাছ যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছে এবং ঔষধি গাছ চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আধুনিক চিকিৎসায় ঔষধি গাছের ব্যবহার দেশে এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ক্যান্সার, কিডনি, হৃদরোগ, লিভারের মতো আরো নানা রোগের জন্য ঔষধ তৈরি হচ্ছে উদ্ভিদ বা ঔষধি গাছ থেকে।
এই সব ঔষধি গাছ রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কেননা, ঔষধি গাছের চাহিদা দেশ-বিদেশে সব জায়গাতে ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে । এই ঔষধি গাছ নিয়ে চলছে নানা গবেষণা ফলে উন্মচিত হচ্ছে বিভিন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা।
HYPTIS SUAVEOLENS( তুলসী গাছ)-
প্রচলিত নাম তোকমা।গণজা তুলসী হিসাবেই সকলের কাছে পরিচিত। সারা বছরই এই উদ্ভিদটি সবখানে পাওয়া যায়। গাছ মাঝারি আকারের গুল্মজাতীয়। লম্বায় বেশি বড় হয় না। ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে এবং পাতাই রয়েছে ঝাঁঝালো গন্ধ।গাছের নিম্নস্থল ঘন লোমযুক্ত। ফুল খুবই ছোট ছোট হয়। ফুলের সাথে ছোট ছোট কালো রংয়ের বীজ হয়ে থাকে।
এই ঔষধি গাছটির পাতা, ফুল, শেকড় সবই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
যে সব চিকিৎসাই ব্যবহার হয়ঃ-- উদ্দীপক, পাকস্থলীর বায়ুনাশক।
ঔষধি গাছ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয় যেমন- সুগন্ধি তৈরিতে এবং চামড়া রোগ বা চর্ম রোগ স্কিন সমস্যা, পুরাতন সর্দি কাশিতে এর ব্যবহার হয়ে আসছে।এই গাছের পাতার রসে অ্যান্টিসপাসমোডিক এবং অ্যান্টিরহোম্যাটিক আছে যা ব্যবহার করা হয় ক্যান্সার এবং টিউমার রোগে।
ABROMA AUGUSTA(উলটকম্বল)
স্থানীয় নাম 'উলটকম্বল'। ঝোপে, জঙ্গলে, বাগানে, রাস্তার পাশে দেখা যায় এদের। এরা ১২ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। পাতাগুলো ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং পাতায় ৩ থেকে ৫টি স্প্ল্যাশযুক্ত প্যাটারিট শিরা থাকে।পাতার ডাটার রং কিছুটা লাল। পাতায় এবং ডালপালায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা সাদা শক্ত লোম থাকে। গাঢ় লাল রংয়ের ফুল ফোটে। ফুল শুকালে বা পাকলে কালো হয়ে যায়। এই উদ্ভিদের পাতা,মূল,ডালপালা ব্যবহার করা যায়।
যে সব চিকিৎসাই ব্যবহার হয়ঃ- ডাই ইউরেটিক, তঞ্চন প্রতিরোধক, জরায়ু সংক্রান্ত ঔষধ।
গর্ভাশয়ের সমস্যা, দুর্বলতা, জ্বলন পেশী,ব্যথা নিয়ন্ত্রণ, রজঃস্রাব জনিত সমস্যা, গনোরিয়াতে সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই মুলতো পাতা ব্যবহার করে থাকে।
BASELLA ALBA(পুঁইশাক)
প্রচলিত নাম পুঁইশাক। সারা দেশে শাক বা তরকারী হিসাবে এটি একটি নিয়মিত খাবার। এর পাতা নরম, চকচকে, মোমীয়,,মসৃণ, । ছোট ছোট বৃত্তাকার ফল বা মেচড়ি হয়ে থাকে।এটি লতানো প্রকৃতির। আকারে ১০ /১৫ মি. লম্বা হয়ে থাকে। লতাগুলো মোটা, নরম ও সবুচ রংএর ।এই উদ্ভিদের পাতা শাক হিসাবে খাওয়া হয়। লতানো ডালও পাতা খাওয়ার উপযোগী। এমনকি এর ফলও অনেকে রান্নাও করে খেয়ে থাকেন।
যে সব চিকিৎসাই ব্যবহার হয়ঃ- ডাই ইউরেটিক, ত্বক মসৃণকারক।
এই উদ্ভিদের পাতার রস হাড়ের ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়। নাকের সমস্যা আলসার অন্ত্রের সমস্যা , কানের সমস্যা, , গনোরিয়া, সহ আরো নানা সমস্যায় এটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
CELOSIA ARGENTEA(মোরগ ফুল)
প্রচলিত নাম মোরগের ঝুটি, কয়লা ঘাস। স্থানীয় নাম মোরগফুল। গুল্মজাতীয় এই উদ্ভিদ খুব একটা লম্বা হয় না। ৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে আর ১ ফুট পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। যেখানে বেশি সূর্যের আলো থাকে , সেসব জায়গায় এই উদ্ভিদ জন্মায়। এর ফুল বিভিন্ন রংয়ের হয়ে থাকে- লাল, হলুদ, সাদা,গোলাপি, রংয়ের ফুল ফোটে। ফুলগুলো মোলায়েম।এই উদ্ভিদের পাতা, শিকড়, ডালপালা, ফুলসহ সব অংশই ব্যবহারযোগ্য।

যে সব চিকিৎসাই ব্যবহার হয়ঃ- প্রদাহ রোধকারী।
রক্তের সমস্যা, মুখের ঘা,ডায়রিয়া, চোখের সমস্যাসহ আরো নানা রোগে এই উদ্ভিদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ALOE INDICA( ঘৃতকুমারী)
'অ্যালোভেরা' স্থানীয় নাম ঘৃতকুমারী। অ্যালোভেরা পাতা নামেই বেশি পরিচিত। আগে এই উদ্ভিদ বনে জঙ্গলে বেড়ে উঠলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবেও এই উদ্ভিদ এখন চাস হচ্ছে। উপকারিতার কথা জেনে অনেকেই বাসায় টবে লাগিয়ে থাকেন । । পাতাগুলো বড়, পুরু ও মাংসল। পাতার প্রান্ত তীক্ষ্ণ। পাতার ভেতর থাকা আঠালো শাঁস উপকারী।
যে সব চিকিৎসাই ব্যবহার হয়ঃ-পরজীবী বিনাশকারী।

পাতার রস বা শাঁস অনেক রোগের টনিকের মত কাজ করে। তবে সরাসরি এই রস ব্যবহার করলে তাতে উপকারের বদলে ক্ষতি হবে। পাতা কেটে নিয়ে কিছুক্ষণ আলাদা জাগাতে রাখতে হবে। তারপর পাতার উপরের অংশ ছুরি দিয়ে বাদ দিয়ে চামচ দিয়ে ভেতরের নরম অংশ নিলেই হবে। এই শাঁস বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে । কাশি, দুর্বলতা, ডিস্পেনিও, হাঁপানি, জন্ডিস রোগে ব্যবহার হয়। মুখে ব্রণের থেকে মুক্তি পেতে অ্যালোভেরার জেল কাজ করে।

SARACA ASOCA DE WILDE (অশোক গাছ)
এটা মাঝারি আকারের উদ্ভিদ হয়ে থাকে । কমলা ও হলুদ রংয়ের ফুল হয়। পাতা হয় গাঢ় সবুজ রংয়ের। ফুলগুলো হয় গুচ্ছকারে । পাতা শিরাবিন্যাস যুক্ত। এই উদ্ভিদের বাকল, পাতা, মূল ব্যবহারের উপযুক।

যে সব চিকিৎসাই ব্যবহার হয়ঃ- টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধী।
গর্ভাশয়ে প্রদাহজনিত, রক্তক্ষরণে, পাইলস, আলসার, ব্রণ, পেট ব্যথাসহ আরো নানা রোগে এই উদ্ভিদের বাকল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ফুল ফুসফুস, সিফিলিস, ডাইশেনারিতে ব্যবহার করা হয়।
WITHANIA SOMNIFERA DUNAL(অশ্বগন্ধা বা চেরি)
প্রচলিত নাম শীতকালীন চেরি। স্থানীয় নাম অশ্বগন্ধা, ধুপ্পা। গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। খুব একটা লম্বা হয় না, ১৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা পুরু এবং গাঢ় সবুজ রংয়ের। পাতায় সাদাভাব আছে। ছোট ছোট ফুল হয়ে থাকে।
এই উদ্ভিদের পাতা, শেকড় ব্যবহার করা হয়।
যে সব চিকিৎসাই ব্যবহার হয়ঃ-অ্যাডাপ্টোজেন, বেদনানাশক।
ভারতীয়দের কাছে এটি পরিচিত ঔষধ। গর্ভাবস্থায় দুর্বলতা, সাধারণ দুর্বলতা, রিউম্যাটিজম, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা এবং স্মৃতিশক্তি ও পেশীশক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়ে থাকে এই উদ্ভিদ। এর পাতা এবং শেকড় মাথাব্যথা, , কাশি, জন্ডিস, চরম দুর্বলতা, মুখের ঘাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আলসারের জন্যেও এর পাতা এবং শেকড় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বিভিন্ন ঔষধি গাছ যেমন শতমূল, অনন্তমূল, তালমূল, বাইচন্ডাল, তুরুপচন্ডাল, বনচন্ডাল, রাহুচন্ডাল, গুরুচণ্ডাল, রক্তচন্ডাল, নিম, নিশিন্দা, শিবজটা, চোকোডাকাত, মনিরাজ, ফনিরাজ, সঙ্খরাজ, সঙ্খমূল, মিস্রিদানা, আমরুল, বালেকমূল, আলকুচি, আমলকী, হরীতকী, বহেরা, হস্তিকরণোপলাশ, একাঙ্গী ইত্যাদি রয়েছে।
ব্যবহারের না জানে এসব উদ্ভিদ ভুলেও ব্যবহার করা যাবে না। তাতে উপকারের থেকে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই জেনে বুঝে ব্যবহার করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url