ধানের ব্লাস্ট রোগের কারন, লক্ষণ ও দমন.
ধানের ব্লাস্ট রোগের কারন, লক্ষণ ও দমনঃ
রোগ পরিচিতিঃ
১) ব্লাস্ট ধানের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। পাইরিকুলারিয়া ওরাইজি (pyricularia oryzae) নামক একধরণের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
২) বাংলাদেশে এটি বর্তমানে ধানের অন্যতম প্রধান রোগ। এ রোগটি বোরো ও আমন মৌসুমে বেশী হয় এবং চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যে কোন সময় এ রোগ দেখা যায়।
৩) অনুকূল অবস্থায় রোগটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। রোগপ্রবণ জাতে রোগ সংক্রমণ হলে শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষতি হয়ে থাকে।
রোগের বাহক ও উৎসঃ
১) ধানের ব্লাস্ট রোগ বীজের মাধ্যেমে এক মৌসুম হতে অন্য মৌসুমে ছড়ায়।
২) রোগাক্রান্ত গাছের জীবাণু, বাতাস ও পোকার মাধ্যমে এক জমি থেকে অন্য জমিতে ছড়িয়ে পড়ে।
৩) রোগাক্রান্ত বীজ ও আশেপাশের আক্রান্ত গাছ থেকেও এ রোগের জীবাণু এসে থাকে।
৪) জমিতে অবস্থিত বিগত বছরের জীবাণু থেকে এ রোগ হতে পারে।
ধানের ব্লাস্ট রোগের অনুকুল অবস্থাঃ
১) কম পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হালকা মাটি।
২) ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও পাতায় শিশির জমে থাকা।
৩) অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করা।
৪) রোগাক্রান্ত বীজ ব্যবহার ও রোগ প্রবণ জাতের ধান চাষ করা।
৫) জমিতে বা জমির আশেপাশে অন্যান্য পোষক গাছ বা আগাছা থাকা।
ব্লাস্ট রোগ প্রধানত ০৩ প্রকার, যথাঃ
(১) পাতা ব্লাস্ট বা Leaf Blast
(২) গীট ব্লাস্ট বা Node Blast
(৩) শীষ ব্লাস্ট বা Neck Blast
পাতা ব্লাস্ট বা Leaf Blast
১. পাতায় ছোট ছোট ডিম্বাকৃতির সাদা বা বাদামি চোখের মত দাগ দেখা দেয়।
২. পর্যায়ক্রমে সমস্ত পাতা ও ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে।
৩. আক্রমণ বেশি হলে ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে রোদে পুড়ে যাওয়ার মতো দেখা যায়।
৪. আক্রান্ত ক্ষেতে অনেক সময় পাতা ও খোলের সংযোগস্থলে কালো দাগ দেখা দেয় যা পরবর্তীতে পচে পাতা ভেঙে পড়ে ফলন বিনষ্ট হয়।
গীট ব্লাস্ট বা Node Blast
১. ধানের থোড় বা গর্ভবতী অবস্থায় এ রোগ হলে গীটে কালো দাগের সৃষ্টি হয়।
২) গিঁট আক্রান্ত হলে আক্রান্ত স্থান কালো ও দুর্বল হয়। জোরে বাতাসের ফলে আক্রান্ত স্থান ভেঙে পড়ে কিন্তু একদম আলাদা হয় না, ফলে আক্রান্ত গিটের উপরের অংশ মারা যায়।
শীষ ব্লাস্ট বা Neck Blast
১) শীষ অবস্থায় এ রোগ হলে শীষের গোড়া কালো বা বাদামী হয়ে যায়।
২) আক্রমণ বেশি হলে শীষের গোড়া ভেঙ্গে যায়।
৩) ধান পুষ্ট হওয়ার পূর্বে রোগের আক্রমণের ফলে শীষের সব ধান চিটা হয়ে যায়।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
১) প্রথমত এ রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করা।
২) আক্রান্ত ক্ষেতের খড়কুটো আগুনে পুড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া।
৩) সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগের মাধ্যমে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
৪) রোগের আক্রমণ হলে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।
৫) বিঘা প্রতি ৫-৭ কেজি এমওপি
সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে অথবা ৫ গ্রাম/ লিটার স্প্রে করা যেতে পারে।
৬) ক্ষেতে পানি সংরক্ষণ করতে হবে।
দমন ব্যবস্থা
১) ট্রাইসাইক্লাজোল (ট্রুপার ৭৫ডব্লিউপি,অটো) @ ০.৮০গ্রাম/ লিটার অথবা ট্রাইসাইক্লাজোল + প্রোপিকোনাজল (ফিলিয়া ৫২৫ইসি, সিনজেন্টা ) @ ০২মিঃলিঃ/ লিটার অথবা থায়োপেনেট মিথাইল (টপসিন এম ৭০ডব্লিউপি, পদ্মা) @ ০২গ্রাম/ লিটার/অথবা টেবুকোনাজল + ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন (নাটিভো, বায়ার) @ ০.৫০গ্রাম/ লিটার, অথবা পাইরাক্লস্ট্রবিন + ডাইমেথোমরফ (হেডলাইন টিম, পদ্মা) @ ২.৫০গ্রাম/লিটার অথবা পাইরাক্লস্ট্রবিন (সেলটিমা ১০ইসি) ০২মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে চারা রোপণের ৫০ দিন পর হতে ১২-১৪ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করা।
উপরের যেকোন একটি ছত্রাকনাশকের সাথে অবশ্যই কার্বেন্ডাজিম (ডিফেন্স বা নোইন বা অটোস্টিন) মিশিয়ে দিবেন৷
পরামর্শের জন্যঃ
কৃষিবিদ
শিবব্রত ভৌমিক বাবু
কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি ইউনিট
পিকেএসএফ এবং সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা
ইমেইলঃ siba_bau@yahoo.com