ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড়.
🧨🧨বিভিন্ন ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ে লিখবো অনেকদিন ধরে ভাবছি৷ আমাদের কৃষকরা এমনকি ডিলাররাও রোগ- পোকামাকড় খুব বেশি চিনে না বলে যথেচ্ছাচারে কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক, রডেন্টিসাইড ইত্যাদি ব্যবহার করেন৷ এর ফলে যত দিন যাচ্ছে পোকামাকড় সে সকল প্রোডাক্ট এর প্রতি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে৷ এতে করে একসময় কোন ঔষধই কাজ না করার শংকা রয়েছে৷ গত সপ্তাহের বৃষ্টির পর জমিতে পানি জমে রয়েছে যা কারেন্ট পোকা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তাই ভালো মতো লক্ষ্য না করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে যেকোন কৃষক ক্ষতিগ্রস্হ হতে পারেন৷ ধানের এই ক্ষতিকারক পোকা সম্মন্ধে নিম্নে দেওয়া হলোঃ
🎏ধানের বাদামি গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা)
🎋🎋এই লক্ষণগুলি আপনার ফসলের ক্ষেত্রে ফুটে উঠতে দেখা যাচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন,
এর উপস্থিতি এবং পাতা শুকনো হয়ে যায়৷
🎋উদ্ভিদ নেতিয়ে পড়ে এবং হলুদ হয়ে যায়.
🎋গাছ থেকে নিঃসৃত মধু জাতীয় রস স্যুটি মোল্ডের বৃদ্ধির জন্যে উপযোগী হয়।
🎋পুর্ণাঙ্গ বাদামী গাছফড়িং নিলাপারভাটা লুগেন (Nilaparvata lugens) ও নিম্ফ ধানগাছের গোড়ায় বসে পাতা এবং কাণ্ডের রস চুষে খায়। গাছ নেতিয়ে পড়ে এবং মরা ভাব ধরে। এ পোকার উচ্চ মাত্রার প্রজননের কালে ধানের পাতা প্রথম দিকে কমলা-হলদে রং ধারন করে, পরে বাদামী এবং অবশেষে শুকিয়ে (হপারবার্ন) গাছ মারা যায়। জমিতে লক্ষণগুলো প্রথমে ছোট ছোট দাগ আকারে দৃশ্যমান হয় কিন্তু বাদামি গাছফড়িং এর বিস্তারের সাথে সাথে দাগ গুলোও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্ত্রী পোকা কাণ্ডে এবং পাতার মধ্যশিরায় ডিম পেড়ে থাকে যা গাছের বাড়তি ক্ষতি ঘটিয়ে থাকে। বাদামী নিম্ফ এবং পূর্ণাঙ্গ পোকা উদ্ভিদের কুশির গোড়া থেকে রস চুষে খায়, এতে মধুরস নিঃসৃত হয় যাতে পরে গাছের গোড়ায় কালো স্যুটি মোল্ড জন্মায়। ধান গাছে ছোট আকারের শীষ হয়, স্বল্প পরিপক্ব দানা, এবং শস্যদানার ওজন কম হয়ে থাকে।
🎃এটা কি কারণে হচ্ছেঃ
বাদামী গাছফড়িং নিলাপারভাটা লুগেন দ্বারা এ আক্রমণ হয়। সেচ সুবিধাযুক্ত অথবা সেচবিহীন চাষাবাদের উভয়ক্ষেত্রেই স্যাঁতস্যাতে জমিতে ধানের প্রজনন পর্যায়ে এ পোকার আক্রমণ হয়। অতিরিক্ত ছায়াযুক্ত জমি, আর্দ্র পরিবেশে ও দীর্ঘ সময় ধরে জমিতে জল আটকে থাকলে এ পোকার আক্রমণ বেশী হয়। ঘন করে চারা রোপন করলে অথবা বপনকৃত জমিতে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যাবহার করলে অথবা মৌসুমের প্রথম দিকে কীটনাশক ব্যাপক ব্যবহারের ফলে উপকারী পোকা মারা গেলে বাদামী গাছফড়িং-এর আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। বর্ষাকালে আক্রমণ কম হয় এবং বর্ষা শেষে শুকনো পরিবেশে বাদামী গাছফড়িং এর আক্রমণ বেড়ে যায়। গাছ একদিকে সামান্য বাঁকা করে সহজেই পোকা পর্যবেক্ষন করা যায় এবং হালকা ভাবে গোড়ায় নাড়া দিলে বাদামি গাছফড়িং পানির উপর পড়ে।
🎄🎫প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
আলোর ফাঁদ যেমন বৈদ্যুতিক বাল্ব, কেরোসিনের ল্যাম্প কোন হালকা রঙবিশিষ্ট দেওয়ালের কাছে অথবা পানির পাত্রের উপর স্থাপন করুন৷
🏀অতিমাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন৷
🏀প্রতিদিন বীজতলা, মূল মাঠ, ধানের কাণ্ডে এবং পানির উপরে পোকা আছে কিনা দেখুন৷
🏀পোকা দূর করার জন্য মূল মাঠ পর্যায়ক্রমে প্লাবিত ও শুষ্ক করুন৷
🃏🃏রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ:
🧸কীটনাশকঃ
পাইমেট্রোজিন ও নিটেনপাইরাম গ্রুপের ঔষধ যেমনঃ পাইটাফ(অটো)/পেদা টিংটিং (ব্যাবিলন এগ্রো)/নাইজিন(ম্যাকডোনাল্ড)/স্পেলেন্ডর (ন্যাশনাল এগ্রি কেয়ার)/পাইরাজিন(এসিআই)/প্লেনাম (সিনজেন্টা) তড়িৎ (হেকেম), গ্ল্যামোর (ইথিপ্রোল+ইমিডাক্লোপ্রিড) এর যেকোন একটি ব্যবহার করতে হবে ধান গাছের গোড়ায়৷
পরামর্শ এর জন্য
কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক
কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি ইউনিট
পিকেএসএফ এবং সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা
ইমেইলঃ siba_bau@yahoo.com